আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাইকেল নিয়ে ভারতের দুই শিক্ষক চট্টগ্রামে, দিলেন সম্প্রীতির বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ০৭:৫৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

‘মানবিক মানুষ হওয়া জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মানুষ ও প্রকৃতি যার শিক্ষক, রাস্তা হলো শিক্ষালয়।

 

এজন্য মানুষ যেমন দুনিয়ায় আসে ঘর বাঁধতে, তেমন ঘর ছাড়তেও। অমোঘ সেই ঘর ছাড়ার ডাকে আমাদের সবাইকে সাড়া দিতে হবে একদিন, এটা তারই এক মহড়া’।

 

‘মানবতার পক্ষে সাইকেল যাত্রা’ স্লোগানে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে আসা দুই শিক্ষক অনিরুদ্ধ ঘোষ ও রিতম ভাণ্ডারী বললেন তাদের এমন অনুভূতির কথা।  

 

কোলকাতা হতে ২৩ এপ্রিল যাত্রা শুরু করেছিলেন তারা দুজন। ২৪ এপ্রিল সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেন। ইতোমধ্যে সাইকেল নিয়ে ঘুরেছেন ভোমরা-সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-বরিশাল-ভোলা-লক্ষীপুর-নোয়াখালী ও ফেনী। বাদ যায়নি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও সৈকত নগর কক্সবাজার।  

 

আলাপকালে তারা জানান, দুই বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিতে অনেক মিল রয়েছে। মাঝে শুধু দূরত্ব তৈরি করেছে কাঁটাতারের বেড়া। খুলনার পল্লীমঙ্গল হাইস্কুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথম কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ব্রজমোহন কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎ হয়েছে বাগেরহাট সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজের শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সাথে। চট্টগ্রামের মানুষ বেশি অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুবৎসল। তাদের সঙ্গে আড্ডা হারিয়ে যাওয়া সময়গুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

দুই শিক্ষক চট্টগ্রামে আসেন ৭ মে। ভর দুপুরে তপ্ত রোদের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে তারা হালিশহর মহব্বত আলী সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও বাঁশখালীর কালীপুর এজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, প্রচার করেছেন সম্প্রীতির বার্তা। যাত্রাপথে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। বয়ঃসন্ধিকালে শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে ছেলেমেয়েদের চিন্তা চেতনায়ও দেখা দেয় পরিবর্তন। তারা যেন মানবতা না হারায়-সে কথা ব্যাখ্যা করেন তারা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বাগত জানান। এসময়ে কথা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গেও। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিধন্য ইউরোপিয়ান ক্লাব, মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ইতিহাস খচিত সিএমপির জাদুঘরে গিয়ে তারা খুঁজেছেন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস।

 

শুক্রবার (১৭ মে) কথা হয় তাদের সঙ্গে। শিক্ষক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, সাইকেল আমার পুরনো বন্ধু, দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশ সাইকেলেই ঘুরেছি। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের কাছে আমার বাড়ি। এবারের সাইকেল যাত্রায় আমার সফরসঙ্গী রিতম ভাণ্ডারী। আমরা দুজনই শিক্ষক। পড়াই পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি দুটি স্কুল গাইডেন্স একাডেমি ও গাইডেন্স ফাউন্ডেশনে। যে মানবতার শিক্ষা আমরা স্কুলের শিশুদের দিয়ে থাকি, আজ সেই শিক্ষাই নিজেরা ছাত্র হয়ে শিখতে চাই পথের মাঝে, মানুষের কাছে। শেখার পরিসরটা স্কুলের চার দেওয়ালের বাইরে ছড়িয়ে দিতে চাই। ঘুরতে ঘুরতে আমরা চাই মানুষের সাহচর্য, চাই মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে, মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে।

 

তিনি বলেন, ধর্মের মূল সৌন্দর্য কর্মেই নিহিত। পরমত ও পরধর্মের প্রতি সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতাই আধুনিক মানুষের প্রথম বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি ধর্মই সুন্দর, প্রতিটি ধর্মই অপরিহার্য, প্রতিটি ধর্মই মানবিক। তাই কে কোন ধর্মের, তা বিবেচনায় আনার চাইতে অনেক বেশি জরুরি- কে কেমন মানুষ, তা বিবেচনায় আনা।

 

শিক্ষক রিতম ভাণ্ডারী বলেন, ঘরের বাঁধন ছেড়ে পথে না বেরোলে, আপন-পরের ভেদ ঘুচবে কিভাবে? কিভাবেই বা জানবো, আমার চেনা দুনিয়ার পাশে আরও অনেক অচেনা আধা-চেনা দুনিয়া আছে কি না? সেই খোঁজেই আমরা দুজন বেরিয়ে পড়েছিলাম পথে। কোনো বাস, উড়োজাহাজে বা মোটরসাইকেলে নয়, আমাদের বাহন সাইকেল। এই সাইকেলে চেপে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছি মানবতার কথা বলতে।

 

চট্টগ্রামে এ দুই শিক্ষকের ভ্রমণকালীন সঙ্গী সঞ্জিত কান্তি দাশ বলেন, গত ২৩ দিন বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, পাহাড়-সাগরে ঘুরে বেরিয়েছেন তাঁরা। ১৭ মে যাত্রা করছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ফিরতিপথে কুষ্টিয়া-নাটোর-রাজশাহী হয়ে ঘরে ফিরবেন এপার বাংলাকে ভালোবেসে ফেলা দুই শিক্ষক।



সবচেয়ে জনপ্রিয়