আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার চাই: মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১১:০৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে এ জন্য পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বুধবার ‘বাংলা প্রচলন উদ্যোগ’ নামের  একটি সংগঠন মেয়রকে সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়ার প্রাক্কালে মেয়র এ প্রতিশ্রæতি দেন। মেয়র বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পাওয়ার পাঁচ দশকেও বাংলা ভাষার সর্বত্র প্রচলন না হওয়া লজ্জার। এ লজ্জা ঘোচাতে আমি কাজ করব। স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের আহবায়ক বীর মুক্তিযুদ্ধো ডা. মাহফুজুর রহমান ও সদস্য সচিব মশিউর রহমান। 

চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের নামে স্থাপনা গড়ব-মেয়র : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের চিরস্মরণীয় করে রাখতে স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বুধবার একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলমের নামে চসিক পাবলিক লাইব্রেরীর নামকরণ ও ফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে মেয়র এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বীর সন্তানরা সাহসী ভূমিকা  রেখেছে। তাদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে। 

 

"কবি মাহবুব উল আলম চগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে সুসংগঠিত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তরুণ ছাত্রনেতারা যখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লড়ছেন, রক্ত ঝড়াচ্ছেন তখন কবি মাহবুব উল আলম ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা রচনা করেন।  কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ’ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম: বীর চট্টগ্রাম!’ আজ বীর চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কবি মাহবুব উল আলমের নামে এ লাইব্রেরির নামকরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।"

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহŸান আপনারা কবি মাহবুব উল আলমের  প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করুন। আপনাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। যে বাংলা হবে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, সা¤প্রদায়িকতা মুক্ত সাম্যের ঠিকানা। 

 

সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আধুনিক চট্টগ্রাম গড়তে চসিক কাজ করছে। বই যুক্তি শেখায়, মুক্তি দেয়। এই লাইব্রেরি পাঠকদের মাঝে আলো ছড়াবে, তাদের স্বাধীনতার চেতনা শেখাবে এই আমার কামনা। 

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ জুবায়ের, আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, কবি মাহবুব উল আলমের জামাতা স্থপতি ইশতিয়াক আহমদ আলম চৌধুরী, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, আঞ্চলিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু প্রমুখ।

 

উল্লেখ্য চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বাংলাকে রাষ্টভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির আহবায়ক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত। ঢাকায় গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। লালদিঘি ময়দানে বিকাল ৩টায় 

 অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। এর কয়েকদিন পরেই সেসময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী আমৃত্যু নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়