কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। মাঘের এক পশলা বৃষ্টিতে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এ দুর্ভোগে পড়েছে সবাই। খুঁড়ে রাখা ড্রেন সংস্কার পূর্ণ না করা ও অনেকাংশ খুঁড়ে ফেলে রাখায় পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে সড়কেই জমে রয়েছে। এ ভোগান্তি থেকে কখন নিস্তার মিলবে, তা অজানা।
সূত্র জানায়, শনিবার ভোরে কক্সবাজারে এক দফা বৃষ্টি হয়। এরপর দুপুর একটার দিকে শুরু হয় অময়ের বর্ষণ। মিনিট বিশেকের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় প্রধান সড়কের সর্বত্র। শহরের বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত কাদা, জলাবদ্ধতায় জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলও মুশকিল হয়ে পড়েছে। সড়কে চলাচলরত অটোরিকশা উল্টে আহত হয়েছেন একাধিক নারী-পুরুষ।
তথ্যমতে, এক সময়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন জনগুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কটি প্রশস্তকরণ প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৬ সালে যাত্রা হওয়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাসস্ট্যান্ড)’ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ৪ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে একশ ৮২ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩০৮ দশমিক ৭৮৫ টাকা। সড়ক নির্মাণ শেষে সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে আরো ৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের নতুন অবয়ব দিতে সরকার ব্যয় করছে ২৫৮ কেটি ৮২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে কউক। দু’ভাগে বিভক্ত প্রকল্পটি পেয়েছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) এবং তাহের ব্রাদার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।
এনডিই অনুমতি পেয়েছে ‘হাশেমিয়া মাদরাসা থেকে হলিডে মোড়’ ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার কাজের। আর তাহের ব্রাদার্স পেয়েছে প্রকল্পের ‘হাশেমিয়া মাদরাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড’ ২ দশমিক ২১০ কিলোমিটারের কাজ।
দরপত্র অনুসারে সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। দুর্ভোগ লাঘবে কউকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই মাসে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা দু’প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে শুরু হলেও গত ১৫ মাসে ড্রেনের কাজই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে মন্থর গতিতে কাজ চালালেও অপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘ সড়কের দু’পাশ ড্রেনের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কচ্ছপ গতির কাজে ভোগান্তি বেড়েছে পৌরবাসী, আদালত পাড়া ও জেলা প্রশাসন অফিসে আসা সেবা প্রার্থীদের। এক অংশ শেষ হওয়ার আগেই আরেক অংশ খোঁড়ায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে জনদুর্ভোগ, ঘটছে দুর্ঘটনাও এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
দেখা যায়, বাসটার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত এলাকায় খুঁড়ে রাখা ড্রেনের অনেক জায়গা এখনো উন্মুক্ত। কাজ করছেন নামে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক। অনেকাংশে বেঁধে রাখা লোহাগুলো উন্মুক্ত হয়ে আছে। পানি চলাচলের জায়গা না থাকায় সড়কের মাঝেই জমে আছে পানি। কাদায় ভরে আছে প্রায় পুরো এলাকার সড়ক।
শনিবার দুপুরে কালুর দোকান সিকদারমহল এলাকায় যাত্রীসহ উল্টে যায় টমটম (অটোরিকশা)। অনেক টমটম চালক-মালিকদের দাবি ভঙ্গুর সড়কের কারণে গেল এক বছরে একাধিকবার গাড়ির স্প্রিং সেট বদলাতে হয়েছে।
কক্সবাজার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী রুনা আকতার বলেন, একদিকে করোনা অপর দিকে দেড় বছর ধরে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দোকান খোলা-বাঁধা ছাড়া আর কিছুই নেই। ফলে ব্যাংক ঋণের পরিধি চক্রবৃদ্ধি হারে কেবল বাড়ছে।
তবে সড়কের ভোগান্তির পেছনে পৌরসভা ও কউকের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে সচেতন মহল। তাদের মতে, যেসময়ে প্রধান সড়কের কাজ শুরু হয়েছে সেই সময়েই শহরের বিভিন্ন উপ-সড়কের উন্নয়ন কাজও শুরু করে পৌরসভা। একসঙ্গে প্রধান ও উপসড়ক চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুন।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রধান সড়ক প্রসস্তকরণ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. খিজির খান বলেন, কার্যাদেশ অনুসারে কাজ শেষ হতে সময় থাকলেও মানুষের ভোগান্তি দেখে দ্রুত কাজ শেষ করতে বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রায় জায়গায় খোঁড়া কাজগুলো দ্রুত সমাপ্ত না করায় অপরিকল্পিত কাজের অভিযোগ আসছে। কার্যাদেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কঠিন পদক্ষেপও নেওয়া যাচ্ছে না। আর কাজ বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।