রাস্তার দু’পাশের সবুজ বৃক্ষের নির্মল বাতাস,গাছের ডালে ডালে নানা রকম পাখির কলোরব মন জুড়িয়ে যায়। সেই সবুজ বৃক্ষের নির্মল বাতাস আর পাখিদের কলরবের আবাস স্থল কেটে ধ্বংস করা হবে। সরকারি কোন কাজ বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নয়,শুধু সামাজিক বনায়নের অজুহাত তুলে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর আরকান সড়ক(পুরাতন মহা সড়ক)’র পাশে সওজের জায়গায় বেড়ে ১১ শতাধিক গাছ কাটবে বন বিভাগ। গাছ বিক্রির কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লুঠপাটের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাসহ কতিপয় আ’লীগ নেতার একটি চক্র। ফলে সরকারের বৃক্ষ রোপনের সবুজ বিপ্লব কর্মসূচী উপেক্ষিত হবে এবং অক্্িরজেন ঘাটতি দেখা দিয়ে কার্বনডাইঅক্সসাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সচেতন মহলের দাবী। ঘটতে পারে পরিবেশ বিপর্যয়। গাছগুলো সওজের জায়গায় বেড়ে উঠলেও এ গাছ কাটার বিষয়ে জানেন না সওজ কর্তৃপক্ষ। এটা বন বিভাগের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি,মূর্খতা ও অজ্ঞতা বলছেন পরিবেশবিদরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের কালুঘাট ব্রীজ থেকে মিলিটারির ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার মহা সড়কের দু’পাশে সারি সারি নানা প্রজাতির সবুজ গাছ পালা রয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। হঠাৎ করে এ গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বন বিভাগের পটিয়া রেঞ্জ। এ লক্ষ্যে বন বিভাগ গাছগুলোর মাঝখানের লাল রং দিয়ে নাম্বারিং করে চিহিৃত করেছেন। এখানে রয়েছে ফলজ,বনজ,ঔষধীসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। বন বিভাগের চিহিৃত গাছগুলোর মধ্যে শতবর্ষি গাছও রয়েছে। যুগ যুগ ধরে গাছগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি নির্মল বাতাস দিয়ে মানুষের অক্্িরজেনের অভাব পুরণ করে আসছে। হঠাৎ করে বন বিভাগের গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্তে জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়,সওজের জায়গার গাছ কোন কারণ ছাড়া কিভাবে বন বিভাগ কাটতে পারে । যুগের পর যুগ গাছগুলো অযতেœ অবহেলার প্রতিকুল পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। কেউ কখনো এগুলোর যতœ নেয়ার বা পরিচর্যা করার প্রয়োজনও মনে করেনি। হঠাৎ করে একটি চক্র বন বিভাগের সাথে আতাত করে সামাজিক বনায়নের ধোঁয়া তুলে গাছগুলো কেটে বিক্রি করে টাকা লুঠপাটের পায়তারা করছেন। পরিবেশ রক্ষায় সবার সোচ্ছার হওয়া উচিত বলে স্থানীয়রা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক বনায়ন হলো স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্টীকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত বনায়ন কর্মসূচী। ভ’মিহীন বিধাবা,দরিদ্র গ্রামীণ জনসাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের মূল লক্ষ্য। মুলত মহা সড়কগুলো সামাজিক বনায়নে কর্মসূচী আওতায় আসে না। ইউনিয়ন পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের সড়কগুলোতে সামাজিক বনায়ণ কর্মসূচীর বাস্তবায়ন করা যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ সড়ক। বোয়ালখালীর মহা সড়কের দু’পাশে কারা সামাজিক বনায়ন করেছিল বা কাদের সাথে চুক্তি হয়েছিল বন বিভাগের কর্মকর্তা পরিস্কার করে বলতে পারেননি। বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে হাতে নিয়ে স্থানীয় একটি বৃক্ষ নিধন চক্রসহ কতিপয় প্রভাবশালী আ’লীগ নেতার যোগসাজোসে গাছগুলো কেটে পরিবেশ নষ্ট করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এতে করে চরম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। নষ্ট হবে পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক মৌ ইদ্রিছ আলী বলেন, পরিবেশ বোদ যদি না থাকে তাহলে তারা সবুজ ধ্বংশ করবে। পরিবেশের ধারবাহিক প্রক্রিয়া না মেনে বৃক্ষ নিধন এটা কোনভাবে যৌতিক না। এটা বন বিভাগের বাড়াবাড়ি, মূর্খতা ও অজ্ঞত। াকরোনা দূর্যোগে মানুষকে অক্্িরজের প্রয়োজনীতা বুঝিয়ে দিয়েছে। একটি অক্রিজেন সিলিন্ডারের গুরুত্ব। বন বিভাগ পরিবেশ নিয়ে,দেশ নিয়ে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে বন বিভাগের লোকজন খেলতে পারে না। এটা কোনভাবেই গ্রহন যোগ্য নয়। এর আগেও বন বিভাগ পটিয়ার মহা সড়কের পাশের বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলেছে।
বন বিভাগের পটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, এগুলো ১৯৯৩ সালে লাগানো বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের আওতার গাছ। তাই বন বিভাগের গাছ কাটতে সওজ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগবে না। হেড অফিসের অনুমতি পেলে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে কোন সংগঠন সামাজিক বনায়নের আওতায় গাছগুলো লাগিয়েছেন বা কাটার আবেদন করেছেন তা জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা পরিস্কার করে কিছুই বলতে পারেননি। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু করতে গেলে উল্টো বন বিভাগের অনুমতি লাগবে।
সওজের(দোহাজারি সড়ক বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ মিয়া বলেন, বন বিভাগ সওজকে এ বিষয়ে কিছুই জানাইনি। সওজ’র জায়গার গাছ সওজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কাটার সিদ্বান্ত নিয়ে চিহিৃত করা এটা রীতিমতো বেআইনি । এ টা বন বিভাগ করতে পারে না। আর যেহেতু গাছগুলো বহু বছরের পুরানো তাই কারা গাছ লাগিয়েছে এ বিষয়ে তার জানা নেই। গাছ কাটার বিষয়ে অবশ্যই সওজ’র সাথে বন বিভাগকে সমন্বয় করতে হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, এ গাছ কাটতে হলে উপজেলা পর্যায়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গাছগুলো কাটা হবে কি হবে না সিদ্ধান্ত হবে।
ছবি ক্যাপসান: বোয়ালখালী মহা সড়কের পাশের কাটার জন্য চিহিৃত করা গাছের সারির একাংশ।