আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সংস্কারের দোহাই দিয়ে সাড়ে তিন বছর বন্ধ শিশু পার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩১ মে ২০২২ ১০:০৪:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

সংস্কারের দোহাই দিয়ে সাড়ে তিন বছর বন্ধ রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় শিশু পার্ক। বলা হয়েছিল, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে পার্কটি চালু করা হবে। কিন্তু এ সাড়ে তিন বছরেও কোনো কাজ শুরু করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। এভাবে পার্কটি বন্ধ থাকায় বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশু-কিশোররা। অবশ্য মেয়র বলছেন, এটি চালু হতে কমপক্ষে আরও দুই বছর লাগবে। অন্যদিকে নগর বিশেষজ্ঞরা চাইছেন কালক্ষেপণ না করে প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশু পার্কেরও সংস্কারকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। জানা গেছে, এরই মধ্যে বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত নতুন করে পার্কের কাজ শুরুই হয়নি। অন্যদিকে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখন আরও প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এদিকে দীর্ঘদিন জাতীয় শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বাবা-মায়েরা। এ বিষয়ে মগবাজারের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অনেক দিন শিশু পার্কটি বন্ধ। অথচ আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু ঘুরতে যেতাম। তারা বিভিন্ন রাইডে উঠে খুব আনন্দ করত। শিশুদের বিনোদনের জন্য এ পার্কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটার কাজ শেষ না হওয়ায় শিশু-কিশোররা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশু পার্কটির আধুনিকায়নের কাজ করবে ডিএসসিসি। এর জন্য স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিএসসিসি শুরু থেকেই বরাদ্দ নিয়ে আপত্তি জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়, শিশু পার্কের বিদ্যমান রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন রাইড বসাতে হবে। রাইড বসানো এবং পার্কের উন্নয়নে এ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ডিএসসিসিকে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু পার্কের আধুনিকায়ন করতে বলে। পরে ডিএসসিসি প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরই মধ্যে ৬১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্পটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শাহবাগ শিশু পার্কের উন্নয়নের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্পে বিনোদনের রাইডগুলো কিনতে একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আশা করি এটা পাস হয়ে যাবে। আগামী বছরে দরপত্রের কার্যক্রম শুরু করতে পারব। আর এ রাইডগুলো প্রতিস্থাপন করতে সব মিলিয়ে আরও দুই বছর লাগবে। এ রাইডগুলো আমেরিকান আদলে প্রতিস্থাপন করা হবে। যেন আমাদের বাচ্চারা নিরাপদে বিনোদন নিতে পারে।’

যা থাকছে প্রকল্পে : এ প্রকল্পে ১৫টি রাইড থাকবে। এগুলো হলো মেইন কস্টার, ডিস্ক ওমেগা ৪০, সুপার এয়ার রেস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যারোসেলস, ইনডেবর, গ্যালন, ১২ডি থিয়েটার, ক্লাইমবিং কার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, ট্রাম্পলাইন বেড, সুপার হ্যাপি সুয়িং, মেরি গো রাউন্ড ও ওয়াটার মারিয়া।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনাতেই বড় দুর্বলতা আছে। শুরু থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেওয়া পরিকল্পনায়ও বড় গলদ ছিল। এজন্য পুরো ঢাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রের আজ এ অবস্থা হয়েছে। এমনিতেই পার্কের সংকট তার ওপর দীর্ঘদিন বন্ধ। এটার প্রভাব পড়ছে শিশু-কিশোরদের ওপর। সুতরাং চাই কালক্ষেপণ না করে খুব দ্রুত পার্কটির কাজ শেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।’