বাংলাদেশে অবস্থানরত দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব করলে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১১ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম- সিসিএনএফ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই প্রতিবাদ প্রকাশ করা হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র প্রধান নির্বাহী ও কক্সবাজার জেলা প্রসক্লাবের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, অধ্যাপক ও লেখক মকবুল আহমেদ, সিএইচআরডিএফ’র প্রধান নির্বাহী ইলিয়াস মিয়া, মানবাধিকার কর্মী মো: আবদুল্লাহ (ম্যাক্স), সিএনএন বাংলা’র সম্পাদক তৌহিদ বেলাল, ডেভেলপমেন্ট ফর পিপল’স কমিউনিটি (ডিপিসিও) এর প্রধান নির্বাহী আনিসুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রমজান আলী, সিনিয়র সাংবাদিক এইচ এম ফরিদুল আলম শাহিন সহ মোট ৭০ জনের অধিক স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি।
সুচনা বক্তব্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার জান্তার নির্যাতনের শিকার হওয়া ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও পরিবেশ প্রতিবেশের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। এতোদিন বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ও পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মানবিক সেবা প্রদান করলেও সাম্প্রতিককালে আমরা দেখছি বিশ্ব ব্যাংক রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ব ব্যংকের এই ধরনের উদ্যোগে আমি নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এই ধরনের উদ্যোগ বন্ধ করার আহ্বান জানাই।
মকবুল আহমেদ বলেন, শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য ঋণ দেওয়ার নজির পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে এই ধরনের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে একটি উদাহরন তৈরির চেষ্ঠা করছে যেন ভবিষ্যতে শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশগুলোকেও ঋণ নিতে বাধ্য করা যায়। তিনি বলেন, জাতিসংঘে’র শরণার্থী বিষয়ক রেজুলেশনে শরণার্থীদের আশ্রয় এবং সহযোগিতার কথা বলা থাকলেও বিশ্ব ব্যাংক রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের জনগনের উপর ঋনের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।
মো: আবদুল্লাহ ম্যাক্স বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ঋণের ভারে জর্জরিত। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু ঋণ ৫৮০ ডলার। আমরা এই ঋণ চাই না। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪০ হাজার নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখতে পাই না। জাতিসংঘ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই ব্যাপারে। আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর উচিত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে চাপ প্রয়োগ করা।
ইলিয়াস মিয়া বলেন, সারা বিশ্বে শরণার্থী সংকট ও যুদ্ধ বেড়েছে। নতুন নতুন সংকটের চাহিদা মেটাতে পূর্ববর্তী সংকটে সহায়তার পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। রোহিঙ্গা মানবিক কর্মসূচিতেও সহায়তা কমে গেছে। এমতাবস্থায়, মানবিক কর্মসূচিতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে হবে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।
তৌহিদ বেলাল বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে টেকনাফের জেলেদের নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করা হয়েছে, তারা চরম কষ্টে জীবনযাপন করছে। তাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সেটা কোনোভাবেই ঋণ নয়।
আনিসুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা মানবিক কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫% স্থানীয়দের জন্য বরাদ্দ করা হলেও আমরা সে ব্যাপারে সন্দিহান। ২৫% অনুদানের সঠিক হিসাব এনজিওদের প্রকাশ করা উচিত এবং এর সঠিক তদারকি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের আরো শক্ত ভুমিকা নেওয়া দরকার। এবিষয়ে আন্তর্জাতিক এনজিও ব্র্যাকের পুল ফান্ড ব্যবস্থপনায়ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তারা কৌশলে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অন্য প্রান্তের এনজিওদের তহবিল দিচ্ছে রোহিঙ্গা মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। যা, স্থানীয়করণের বিরোধী।