আজ শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

রামগড়ে শান্তিবাহিনীর গণহত্যার শিকার বাঙালিরা আজও পায়নি বিচার

রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:১৬:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

১৯৮৬ সালে খাগড়াছড়ির রামগড়ে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর নির্মম ও নৃশংস গণহত্যার শিকার নিরীহ বাঙ্গালীদের তালিকা প্রণয়ন, গণকবরগুলো সংরক্ষণ, নিহতের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ এবং নিজস্ব বাস্তুভিটায় পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে সেদিনের বিভীষিকাময় স্মৃতি বুকে লালন করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। স্বজনহারা পরিবারগুলো সেই বিভৎসতার কথা মনে হলে এখনও ভয়ে আঁতকে ওঠেন। বিভীষিকার এতদিন পরেও ঘটনার বিচার পায়নি নিহতের পরিবারগুলো। এতদিন পরেও নিজ বসতভিটায় ফিরতে পারেনি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলো।

১৯৮৬ সালে বিভিন্ন সময়ে রামগড় উপজেলা সদর ছাড়াও চিনছড়ি পাড়া, খাগড়াবিল, পাতাছড়া, হাফছড়ি (বর্তমান গুইমারা উপজেলা) সহ বিভিন্ন স্থানেই গণহত্যার শিকার হন অসংখ্য নিরীহ বাঙ্গালী।

১৯৮৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর শান্তিবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে আঁতকে ওঠেন পাতাছড়ার ডাকবাংলা পাড়ার বাসিন্দারা। শান্তিবাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলি ও অগ্নিসংযোগে সেদিন নিহত হয়েছিল ৫ শিশুসহ ৭ জন। কয়েকদিন পর ঘটনাস্থলের খুব কাছ থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল স্থানীয়রা। একই বছরের ১৩ আগস্ট আরও এক নিরীহ গ্রামবাসীকে গুম করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রথমদিনের ঘটনায় নিহতদের গণকবরে ঠাঁই হলেও পরবর্তীতে নিহতদের কপালে তাও জুটেনি।

১৭ ডিসেম্বর ১নং রামগড় ইউনিয়নের চিনছড়িপাড়া গ্রামে মা, বাবা ও দুই ভাই বোনকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীদল শান্তিবাহিনী। নিহতদের গণকবর দেয়া হয় ঐ এলাকার একটি কবরস্থানে।

একই বছর ২২ ডিসেম্বর রাতে রামগড় বাজার, সিনেমা হল , দারোগাপাড়া, মহামুনি, ফেনীরকুল, সোনাইপুল ও খাগড়াবিল এলাকায় হত্যা, অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ ঘটনার কথা ভুলতে পারেনি কেউ। শান্তিবাহিনীর সেদিনের নারকীয় হামলায় সরকারি হিসেবে ২২জন নিরীহ বাঙ্গালী মারা যায়।অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট।

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর আরেক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় রামগড় ইউনিয়নের খাগড়াবিল বাজারে। সশস্ত্র শান্তিবাহিনী ঐদিন রাতে খাগড়াবিল বাজার ঘেরাও করে দোকানে ঘুমন্ত ব্যবসায়িদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিভৎস সে ঘটনায় ৮ জন বাঙ্গালী মারা যায়।

নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর পরপর এমন হামলায় ভয়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সরকারী ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা গুচ্ছগ্রামে। বন্দিদশা নামক গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেয়া শত শত পরিবার কয়েক বছর পর আবারও নিজেদের বাস্তুভিটায় ফেরার চেষ্টা করলেও তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন তাদেরকে নিজ ভিটায় ফিরতে দেয়নি। আর ৩৫ বছরেও ফেরা হয়নি।