আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাঙামাটিতে বাড়ছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : শনিবার ৮ জুলাই ২০২৩ ১১:০৭:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

 

ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পার্বত্য তিন জেলা। তবে গত কয়েক বছর ধরে ম্যালেরিয়া রোগী সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। রাঙামাটির উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়িতে রোগী বেশি পাওয়া যায়।

 

দীর্ঘ বর্ষা, মশারির কার্যকারিতা কমে যাওয়া ম্যালেরিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন জেলা সিভিল সার্জন।

 

 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ে গত মে ও জুন থেকে দ্রুত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রকোপ বেশি। যা গত দুই মাসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে।

 

 

এ বছর অন্যান্য উপজেলার থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে জুরাছড়ি উপজেলায়। বিশেষ করে দুর্গম মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মৈদং ইউনিয়নের আমতলা, ভুয়াতলীছড়া, জামেরছড়ি ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে গবাছড়ি, করইদিয়া, বগাখালী, দুমদুম্যা লাম্বাবাগছড়া, আদিয়াবছড়া গ্রামের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

 

দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গোবাছড়ি, ৪নং ওয়ার্ডের করাইছড়ি, ৫নং ওয়ার্ডের বগাখালী, ৬নং ওয়ার্ডের দুমদুম্যা ও আদিবছড়িতে সব বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় খুব সহজেই সেখানে যাওয়া সম্ভব হয় না। এসব স্থানে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ দিন। সীমান্ত সড়ক হওয়াতে বগাখালী, দুমদুম্যা ও আদিবছড়িতে মোটরসাইকেলে যাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে জেলা শহরে আসতেও গুনতে হয় হাজার টাকা। আবার বিলাইছড়ি উপজেলা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে যাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি হলে পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

 

 

রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে ১৭ হাজার ৪৫, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৯৯৩, ২০১৯ সালে ছয় হাজার তিন, ২০২০ সালে এক হাজার ৩৭৭, ২০২১ সালে এক হাজার ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন।

 

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, চলতি বছরের মে মাসে ২৭, জুনে ১৫৯ জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৯ জন।

 

দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্র্যাকসহ ইউনিয়ন পরিষদ সম্মিলিতভাবে সমন্বয় করে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ না নিলে এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্র্যাক থেকে বিনামূল্যে মশারি দেয়া হয় এর মেয়াদ থাকে তিন বছর। এ বছর তৃতীয় বছর হওয়ার কারণে মশারি কার্যকারিতা কমে গেছে। তাই ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যায় দুর্গম এলাকাগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর নতুন করে দুই হাজার ৩৫০টি মশারি বিতরণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রবণতা বেশি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী ও ব্র্যাকের কর্মীরা কাজ করছে। দুর্গমতার কারণে কিছুটা তো সমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়।