আসছে রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। মার্কেট, শপিংমল, দোকানে সব ধরনের পণ্য ক্রয়ের পাকা রসিদ সংগ্রহে রাখা, পণ্যের মূল্য তালিকা হালনাগাদের তাগিদ দিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়াও কৃত্রিম সংকট তৈরিতে বিরত থাকা, মজুতদারি না করা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় তদারকিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম জেলায় ৪০টি মনিটরিং টিম গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারের দপ্তরগুলোর সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সরবরাহ অবাধ রাখার লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
সভায় খাতুনগঞ্জের শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, রমজানকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি করা হয়েছে। সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। দামও কমছে প্রতিদিন। চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি ছোলার দাম কমেছে ৫ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে মানভেদে ৭৬-৭৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে ছোলা। পাইকারি বাজারে ডালের দামও কমছে বলে জানান তিনি।
আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বছরে ৬৫- ৭০ লাখ টন গম আমদানি হয়। ডাল আমদানি হয় ৫-৬ লাখ টন। দুই থেকে আড়াই লাখ টন ছোলা আমদানি হয়। কিন্তু রমজানে কী পরিমাণ আমদানি হয়েছে তা খাতুনগঞ্জ থেকে বলা সম্ভব নয়। সেন্ট্রাল ডেটা ছাড়া এসব তথ্য বলা সম্ভব নয়। এ সময় বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে মধ্যস্বত্বভোগীদের অংশগ্রহণ কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় এফবিসিসিআই প্রতিনিধি মাহফুজুল হক শাহ বলেন, দেশে বছরে ২২-২৫ লাখ টন চিনি লাগে। দেশে বড় চারটি কোম্পানি চিনি উৎপাদন করে। বড় ব্যবসায়ীরা সময়ে সময়ে বড় বড় লোকসানও গোনেন। কিন্তু রমজান আসলে ব্যবসায়ীদের চেপে ধরা হয়। এটা ঠিক না। এ সময় বাজার মনিটরিংয়ে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান এ ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ও চট্টগ্রাম রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, গ্যাস বিদ্যুৎ পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বড় ব্যবসায়ীরাও বলছেন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে, তাহলে প্রতি বছর রমজান এলেই সংকট তৈরি হয় কেন? বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াত্ম্য কমানোর দাবি জানান তিনি। হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে কালো তেল ব্যবহারে কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজ সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে সভাকে অবহিত করেন।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহমুদউল্লাহ মারুফ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হাসান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পংকজ দত্ত, উইমেন চেম্বারের আবিদা মোস্তফা, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহানগর শাখার সভাপতি সালামত আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম চাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ক্যাব ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জানানো হয়, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে দুইটি করে মোট ৩০টি এবং মহানগরে ১০টি মনিটরিং টিম বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাবে। মনিটরিং টিমে ক্যাব, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ পুলিশ, র্যাব, আনসারদের সম্পৃক্ত করার কথা জানানো হয়।
বাজার মনিটরিংয়ের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত সব দোকানে পণ্যের ক্রয় রশিদ দেখবেন। এজন্য দোকানে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্য ক্রয়ের রশিদ রাখা, পণ্য তালিকা রাখার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়। তাছাড়া রমজানে কোথাও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিমকে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।