চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন এবং তারও ১৫ মাস আগে হওয়া চন্দনাইশ পৌর নির্বাচনে কেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটে একই অস্ত্রধারী গ্রুপ। গ্রুপের হোতা শওকত হোসেন (৩২)। শনিবার (১১ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নাজমুন নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন এই অস্ত্রধারী। জবানবন্দিতে ভোটকেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। চক্রের সদস্যরা একেকজন দুই থেকে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়েছিলেন। পরে তারা জানতে পারেন, গুলিতে আহত কয়েকজনের মধ্যে এক কলেজছাত্র মারা গিয়েছেন।
আদালতে জবানবন্দি দেওয়া শওকত হোসেন নামের এই অস্ত্রধারীসহ তিনজনকে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালদীঘি এলাকা থেকে গত বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে সাতকানিয়ায় ভোটের দিন প্রদর্শন করা এই তিনজনের অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- কামরুল আজাদ ওরফে সুমন (৩২) ও আজাহার উদ্দিন (৩২)। তাদের মধ্যে কামরুল গ্রেফতারের পরদিনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনিও সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের নির্বাচনে কেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটার বর্ণনা দেন। অন্যদিকে গ্রেফতার হওয়া অপর আসামি আজাহারকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রোববার (১২ জুন) তাকেও আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম।
চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই পরিদর্শক মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে কেন্দ্র দখলে ভাড়ায় খাটা গ্রুপটির দলনেতা শওকত হোসেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ১৫ মাস আগে চন্দনাইশে পৌর নির্বাচনে এক কলেজছাত্রকে গুলি করে মারার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। সেদিন শওকত হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে নিজেই দুই রাউন্ড গুলি করেছিলেন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন কামরুল, আজাহার, মোরশেদসহ সাত-আটজন। সেদিন তারা সবাই একসঙ্গে গুলি চালিয়েছিলেন। গুলির শব্দে ভোটকেন্দ্রে আতংক তৈরি হলে ভোট দিতে আসা লোকজন পালিয়ে যান। পরে অস্ত্রধারীরা ফিরে আসেন।
জবানবন্দিতে শওকত উল্লেখ করেন, ভোটের আগের দিন রাতে চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রহিম উদ্দিনের ঘরে যান তারা। অস্ত্র ছাড়াও রাতে হাতখরচের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় তাদের। ভোটের দিনও হাত খরচের জন্য দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা করে। আসার সময় নাস্তা-পানি খাওয়ার জন্য আরও তিন হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দুপুরে আবদুর রহিম (স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা) ও মো. সেলিম (আওয়ামী লীগের সমর্থক) নামের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে গোলাগুলি হয়। কেন্দ্রের পাশেই ছিলেন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর ইসলাম। গুলিতে হাবিব গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় হাবিবের মা ছকিনা খাতুন চন্দনাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।