মার্কিন ডলার সংকটের মুখে আমদানিতে লাগাম টানায় বিশ্বের ১০০ ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করাই পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
২০২২ সালে ৩১ লাখ ৪২ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেও আন্তর্জাতিক শিপিং ম্যাগাজিন লয়েড'স লিস্টে তালিকায় এগুতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর। বরং, ৩ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের মধ্যে ৬৭তম স্থানে জায়গা পেয়েছে এই বন্দর। অবশ্য তার আগের বছর ২০২১ সালে রেকর্ড ৩২ লাখ ১৪ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর ৬৪তম স্থানে উঠে এসেছিল।
তালিকায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমাদের কনটেইনারাইজ পণ্যের আমদানি কমেছে। বিপরীতে আমাদের বাল্কের আমদানি বেড়েছে। যেহেতু লয়েড'স তালিকায় কনটেইনারের হিসাব করা হয়, সেহেতু আমরা তালিকায় এই অবস্থানে রয়েছি। তাছাড়া বিশ্বের অনেক বড় বড় কনটেইনার বন্দরও পিছিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমবারের মতো ২০০৯ সালে ৯৮তম স্থান নিয়ে লয়েড’স তালিকায় স্থান করে নেয়। গত ১৩ বছরেই ওঠানামা হয়েছে এই বন্দরের তালিকায়। এর মধ্যে ২০১০ সালে বন্দরটি ১০ ধাপ এগিয়ে ৮৮তম স্থানে নেমে আসে। পরে ২০১১ সালে ১ ধাপ পিছিয়ে ৮৯তম, ২০১২ সালে ১ ধাপ পিছিয়ে ৯০তম, ২০১৩ সালে ৪ ধাপ এগিয়ে ৮৬তম, ২০১৪ সালে ১ ধাপ পিছিয়ে ৮৭তম, ২০১৫ সালে ১০ ধাপ এগিয়ে ৭৬তম, ২০১৬ সালে ৫ ধাপ এগিয়ে ৭১ তম, ২০১৭ সালে ১ ধাপ এগিয়ে ৭০তম, ২০১৮ সালে ৬ ধাপ এগিয়ে ৬৪তম, ২০১৯ সালে ৬ ধাপ এগিয়ে ৫৮তম, ২০২০ সালে ৯ ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম এবং ২০২১ সালে ৩ ধাপ এগিয়ে ৬৪তম অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
তবে ২০২২ সালে ৫০তম স্থানে উঠে আসার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চললেও বছরের মাঝামাঝিতে এসে থমকে যায় অগ্রযাত্রা। বিশেষ করে ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে বন্দরের কাজ অর্ধেকে নেমে আসে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং এবং ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এসময়ে এ বন্দরে জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ২৫৩টি। যার প্রভাব পড়েছে লয়েড'সের তালিকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট অ্যান্ড ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘বিলাসবহুল যেসব পণ্য রয়েছে, সেসব পণ্যের আমদানি কমে যাওয়াতে সার্বিকভাবে আমদানির হার কমে এসেছে। এসব কারণেই হয়তো লয়েড’সের তালিকায় বন্দর পিছিয়ে গেছে।
তবে পরবর্তীতে তালিকায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের সক্ষমতা সীমাবন্ধ। কিন্তু এর মধ্যেও আমরা যা অর্জন করেছি, তার থেকে আমরা কিছুটা কম অর্জন করেছি বিধায় আমরা এই তালিকায় কিছুটা পিছিয়েছি। সুতরাং, অবশ্যই আমরা তা উতরে যাবো।
উল্লেখ্য, ৪ কোটি ৭৩ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে লয়েড'স তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে চীনের সাংহাই বন্দর। এর পরে ৩ কোটি ৭৪ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে সিঙ্গাপুর বন্দর রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট কাটাতে ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকেই বাংলাদেশ সরকার বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে। যার প্রভাব পড়েছে লয়েড’সের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানে। তালিকায় আগে থেকে ৩ ধাপ পিছিয়ে এই বন্দর। তবে সব জটিলতা কাটিয়ে ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে পুরোদমে আমদানি শুরু হয়েছে। তাই বন্দর কর্মকর্তারা আশা করছেন লয়েড’সের আগামী তালিকায় অনেকটা এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর।