ফটিকছড়ির ধর্মপুরে রাস্তার ব্রিক সলিংয়ের ইট তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে ধর্মপুর ইউনিয়নের সর্তা আজাদী বাজার সড়কের সামাদ বাড়ী অংশের প্রায় ২শত মিটার রাস্তার সবগুলো ইট তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুল হক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৫/২০ আগে চেয়ারম্যানের লোকজন হঠাৎ করে রাস্তাটির ইট গুলো তুলে নিয়ে যায়। জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ রাস্তাটিতে এলজিএসপি তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাট ব্রিক সলিং করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হাজি ইদ্রিস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তাটি নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দু বছর আগে এ রাস্তাটির একাংশ ব্রিক সলিং করা হলেও রহস্যজনক কারনে কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে এসব ইট তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এমনিতেই রাস্তাটি চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় জনদুর্ভোগ সীমাহীন। তার উপর আবার ইট গুলো তুলে নেয়ায় বর্তমানে জনদুর্ভোগ আরো চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার ইট গুলো তুলে কোথায় নিয়ে গেছে তা তারা জানেনা। এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিহাব উদ্দিন শোয়াইব বলেন, চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার নির্দেশে ইট গুলো তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পেয়ারী মোহন সড়কে ব্রিক সলিংয়ের কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু পেয়ারী মোহন বাড়ীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী মিলন জানান, তাদের বাড়ীর সড়কে ব্রিক সলিংয়ের কাজ তারা গ্রামবাসি থেকে চাঁদা তুলে করেছেন। ওয়ার্ড মেম্বার শুধু মাত্র কিছু শ্রমিক দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া ইউপি সদস্য শোয়াইব পেয়ারী মোহন সড়কে সাড়ে তিনশত মিটার নতুন ব্রিক সলিংয়ের কাজ করেছেন দাবী করলেও স্থানীয়রা বলছে সড়কটির কাজ হয়েছে ২ থেকে আড়াইশ মিটার। স্থানীয় গ্রামবাসি এবং ওয়ার্ড মেম্বারের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুল হক বলেন, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে ইট গুলো তুলে নতুন রাস্তায় কাজে লাগানো হয়েছে। ইট বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবী করেন তিনি। এদিকে চলতি বছর রাস্তাটির ৫ শত মিটার ডাবল ব্রিক সলিং বরাদ্দ হয়েছে। ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটির ডাবল ব্রিক সলিংয়ের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় আজমীর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের ২৪ তারিখ কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে সামনের বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানান স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা। এ বিষয়ে আজমীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার পর ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করতে গেলে চেয়ারম্যানের বাঁধায় কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। তবে চেয়ারম্যান বলেন পাশের বাড়ীতে একটি বিয়ে অনুষ্ঠান ছিল। ধুলাবালি উড়বে এবং বিয়ে বাড়ীর পরিবেশ নষ্ট হবে তাই কয়েকদিন পর কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সুত্র জানায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আজমীর এন্টারপ্রাইজ থেকে ৫০০ মিটার রাস্তার নতুন ডাবল ব্রিক সলিংয়ের কাজটি সাব কন্ট্রাকে নেয়ার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুল হক। এতে ঠিকাদার রাজি না হওয়ায় তিনি এসব ইট তুলে নিয়ে গেছেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আইয়ুবকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। একটি রাস্তায় ব্রিক সলিং থাকার পরেও একই সড়কে পুনরায় নতুন প্রকল্প টেন্ডার দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ওই সড়কে নতুন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় আগের ইট গুলো চেয়ারম্যান চাইলে তুলে নিতে পারবেন তবে তুলে নেয়া সমস্ত ইট আবারো রাস্তার কাজে ব্যবহার করতে হবে। তা না করে কোন ধরনের অনিয়ম করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।