ফটিকছড়ির নারায়নহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত পাঠ্য পুস্তক নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মাদরাসার সুপার ও আল আরাফাহ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইলের যোগসাজশে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে মাদরাসার সুপার আ.ও.ম ফারুক হোসাইন তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আল আরাফাহ প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল তাঁর সাথে প্রতারনা করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় সুত্র জানায়, নারায়নহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম ১ম বর্ষের ২৫ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড সিলেবাস অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পাঠ্যপুস্তক ক্রয় বাবদ অবশিষ্ট টাকা মাদরাসার দরিদ্র তহবিল থেকে যোগান দেয়ার কথা। পুর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে আল আরাফাহ প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল এসব পাঠ্যপুস্তক ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মাদরাসার সুপারকে। কিন্তু ঢাকা থেকে এসব বই না এনে গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা আজহার বুকস থেকে চার প্যাকেটে এসব পাঠ্য পুস্তক নারায়নহাট হোসেন লাইব্রেরীর ঠিকানায় পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল বই সংগ্রহ করে মাদ্রাসায় পৌঁছে দেন। পরদিন এসব বই মাদ্রাসার সুপারকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু মাদরাসার সুপার এসব পাঠ্যপুস্তকের প্যাকেট খুলে দেখেন এগুলো ঢাকা থেকে পাঠানো হয়নি। বরং চট্টগ্রামের আজহার বুকস থেকে পাঠানো হয়েছে। এদিকে এসব বই বাইরের প্রকাশনা থেকে সংগ্রহ করায় স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের মাঝেও চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে ঘটনাটি সবর্ত্র জানাজানি হয়। আজহার বুকস থেকে পাঠানো বই গুলোর প্যাকেট খুলে দেখা যায় সকল বইয়ের মুল্য তালিকায় ঘসামাজা করে নতুন মুল্য সংযোজন করা হয়েছে। আল আরাফাহ প্রকাশনা থেকে বই সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য প্রকাশনা থেকে নিম্ম মানের বই উচ্চ মুল্যে সরবারাহ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদরাসার সুপার ফারুক হোসাইন। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আল আরাফাহ প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিয়ে টানা হেঁচড়া না করতে অনুরোধ করেন। মাদরাসার সুপার ফারুক হোসাইন বলেন, আল আরাফাহ প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইল তাঁর সাথে প্রতারণা করেছেন। স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তাঁর অজান্তে কে বা কারা এসব বই তাঁর দোকানের ঠিকানায় পাঠান। তিনি বলেন, মাদরাসার সুপার নিজেই আল আরাফাহ প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি ইসমাইলের সাথে আতাঁত করে এসব নিম্ম মানের বই মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সংগ্রহ করেন। পরে ঘটনা জানাজানি হওয়ায় নিজে সাধু সাজার চেষ্টা করছেন। হোসেন বলেন, এসব অর্থলোভী গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ফটিকছড়ি পুস্তক বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, এ ধরনের প্রকাশনার প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু বিক্রয় প্রতিনিধির কারণে তাদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। তিনি বলেন, একজন বিক্রয় প্রতিনিধি পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে মার্কেটিং করবেন। কিন্তু তা না করে তারা কতিপয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে আতাঁত করে নিজরাই এ ধরনের নিম্ম মানের বই বিক্রয় করছেন যা মোটেই কাম্য নয়। মাদারাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, মাদরাসার আলিম ১ম বর্ষের ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিনামুল্যে বই দেয়ার জন্য কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বই সংগ্রহ করার জন্য সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, বইয়ের মুল্য ঘষামাজা করে নিম্ন মানের বই সরবরাহ করলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।