রোববার (৪ ডিসেম্বর) নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা। জনসভাকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে বন্দরনগরীর চিত্র। পুরো নগরজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা, রাতে করা হচ্ছে লাইটিং। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে। কারণ, বহুদিন পর আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
নগর ও উপজেলায় প্রস্তুতিমূলক কর্মযজ্ঞ চলছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী। সমাবেশ সফল করতে গত ১৫ দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, এই জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটবে। শহর ও জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সংস্কার হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লেখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। চলছে মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণাও। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ড মাঠের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
চট্টগ্রামবাসী বলছেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে চট্টগ্রাম বন্দর পেয়েছে নতুন রূপ, সংযুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, চালু হয়েছে সিটিএমএস, সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইয়ার্ড ও সার্ভিস জেটি, বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বহুগুণ, বেড়েছে রাজস্ব অর্জনের পরিমাণ। নগরের পতেঙ্গা এলাকায় ৪টি জেটি নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে পিসিটি। পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলি অংশের সমুদ্র পাড়ে তৈরি হচ্ছে জোয়ার ভাটার যে কোনও সময়েই মাদার ভেসেল বার্থিং করতে সক্ষমতা সম্পন্ন বে-টার্মিনাল।
এছাড়াও মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। বাঁশখালীর গন্ডামারা ও মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে বৃহৎ আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ সহজতর করতে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে দুই টিউব বিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ সড়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা হতে ফৌজদার হাট পর্যন্ত সমুদ্র তীর ধরে নির্মিত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সিটি আউটার রিং রোড। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন হচ্ছে। এছাড়াও যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে এবং তাঁর মুখে আগামীর বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন চট্টগ্রামবাসী।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে মুক্তকণ্ঠে কথা বলবেন। তাই এই জনসভা সফল করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। তাই ৪ ডিসেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে শুধু পলোগ্রাউন্ড ময়দান নয়, সারা চট্টগ্রাম নগরীকে জনসমুদ্রের জনতরঙ্গে উদ্বেলিত করে তুলতে হবে। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামের হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলে আসবে। এতে সভাস্থল ছাপিয়ে আশপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান দিতে হবে আওয়ামী লীগ অবিনশ্বর এবং অপরাজেয় সংঘশক্তি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সমাবেশে আগত লোকজনের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বড় পর্দায় সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা করা হবে। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণ প্রস্তুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত ১৫ দিন ধরে এই কর্মযজ্ঞ চলছে। জনসভাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভা উপলক্ষে নগরে নতুন সাজে সেজেছে। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষায় রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে চট্টগ্রামে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী সমর্থকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন।