চট্টগ্রাম মেট্টোপলিন পুলিশের (সিএমপি) উদ্যোগে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আজ ১ মার্চ বুধবার সকাল ১০টায় নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনস্থ মাল্টিপারপাস শেডে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিধান, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের বিন¤্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাঁদের স্মৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন সিএমপি কমিশনার, ডিআইজি, জেলা এসপি, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র্যাব, রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, এপিবিএন, আরআরএফ, নৌ পুলিশ ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যবৃন্দ। এসময় এক মিনিট নীরবতা পালনসহ নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ওয়েল ফেয়ার এন্ড ফোর্স) মোঃ মহিতুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক ও জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফি উল্লাহ। স্মৃতিচারণ করেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর অনিতা রানী রায়ের মেয়ে অর্পিতা রায় চৌধুরী ও কনস্টেবল অভি দাশের মা রুমি দাশ। সভায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের মাঝে সম্মাননা তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী যখন দামপাড়া ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করে তখন তাদের প্রতিরোধ করতে পুলিশ বাহিনী প্রথম অস্ত্র ধরেছিল। সে সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী পাক সেনাদের হাতে অনেক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তাই পুলিশ বাহিনীর আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে হাজার মায়ের অশ্রæ, ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্বতের বিনিময়ে গড়া এ বাংলাদেশ। তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা। দেশকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদেরকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে হবে। তাই এ দেশকে ভালোবাসতে হবে।
চসিক মেয়র আরও বলেন, কোভিডকালীন দেশের ক্রান্তিলগ্নে যখন পরিবারের কোন সদস্য কেউ কারও পাশে ছিলনা তখন পুলিশ বাহিনী জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে লাশ কাঁেধ নিয়েছে, জাতির দুঃসময়ে তারা তাদের দায়িত্বে একটুও অবহেলা করেনি। এসময় কোভিডে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক মৃত্যুবরণ করেছে।আমরা যাদেরকে হারিয়েছি তাদেরকে হয়তো আর কোনদিন পাবোনা, কিন্তু তাদের অবদানের কথা মনে রাখতে হবে।তাদেও আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবেনা।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, পুলিশ সদস্যরা অন্যের নিরাপত্তা ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা ও সমস্যার কথাই ভুলে যান। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যু পরে পরিবারের লোকেরাই কেবল বুঝেন তারা কী হারিয়েছেন। নানাবিধ সমস্যা নিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এসব পরিবারের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।