আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গ্রেপ্তারকৃত চালককে জিজ্ঞাসাবাদ

পিকআপ চাপায় ৫ ভাই নিহতের কারণ জানাল র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৩৪:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

সম্প্রতি দেশের মর্মান্তিক ঘটনা কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে পাঁচ ভাই নিহতের বিষয়টি। ঘন কুয়াশায় পিকআপের বেপরোয়া গতি কেড়ে নেয় সহোদর ভাইদের প্রাণ। এই ঘটনায় পিকআপটির চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমের কাছে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারকৃত চালক সাইফুলের বরাত দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, নিহতদের কেউই গ্রেপ্তারকৃত চালকের পূর্বপরিচিত নন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও ২ বছর ধরে পিকআপ ও চান্দের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পর পিকআপ মালিকের নির্দেশে পালিয়ে থাকার উদ্দেশে আত্মোগোপনে যান সাইফুল।

 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ৯ ভাই-বোন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় পিকআপের চাপায় ৫ সহোদর অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৪) নিহত হন। এ ঘটনায় আহত তাদের ভাই রক্তিম সুশীল এবং বোন হীরা সুশীল বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে পলাতক চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ঘটনার সময় তারেক ও রবিউল নামে দুজনকে নিয়ে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজি বোঝাই পিকআপ নিয়ে রওনা দেন সাইফুল। তারেক পিকআপের মালিক মাহমুদুল করিমের ছেলে এবং রবিউল তার ভাগ্নে। কুয়াশার মধ্যেও দ্রুত সবজি ডেলিভারির উদ্দেশ্যে ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন সাইফুল।

কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৯ ভাই-বোনকে দেখতে না পেরে তাদের চাপা দেন সাইফুল। এরপর তিনি পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

পরবর্তীতে চালক সাইফুল পিকআপ মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। গাড়িটির মালিক তাকে পিকআপটি কোনো এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় পিকআপটি রেখে বাসে করে চকরিয়ায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন।

এ সময় পিকআপের মালিক মাহমুদুল তাকে অন্তত এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে তিনি প্রথমে বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যান। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশে ঢাকায় আসেনে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে সাইফুল জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারের কেউ তার পূর্বপরিচিত নন। মালিকের সঙ্গে এই পরিবারের কোনো পরিচয় আছে কি না, সাইফুল বলতে পারেনি। পিকআপের মালিক ও তার ছেলে, ভাগিনা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি যদি মনে করেন ঘটনায় আরও কারও সংশ্লিষ্টতা বা অন্য কোনো মোটিভ রয়েছে, তাহলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, পিকআপ চালক সাইফুলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দুই বছর ধরে পিকআপ, চান্দের গাড়ি ও তিন টনের ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাতেন তিনি। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ওই পিকআপটি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে চালানো শুরু করেন। এর আগে তিনি বান্দরবানের লামায় রাবার বাগানে চাকরি করতেন।