একটি প্লেন উড্ডয়নের পর থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পাইলটকে পেরোতে হয় বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রতিটি সেকেন্ডই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসময় এক মুহূর্তের জন্য মনোযোগ হারালেই ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। অথচ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে উড্ডয়ন অথবা অবতরণের সময় পাইলটদের চোখে নিয়মিত নিক্ষেপ করা হচ্ছে লেজার লাইট। এতে তাদের সাময়িক দৃষ্টিবিভ্রম হয়। পাইলটদের অভিযোগের ভিত্তিতে বেবিচক ও পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অভিযান পরিচালনা করেও মিলছে না সুফল।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় প্লেন লক্ষ্য করে লেজার লাইট নিক্ষেপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন সংস্থার পাইলটদের। তারা বলছেন, এ লেজার লাইট নিক্ষেপের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাইলটরা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রতিনিয়ত লেজার লাইট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে বেবিচক থেকে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় অনেকে রাতের আকাশে উড়ন্ত প্লেন লক্ষ্য করে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করছে। এছাড়া বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হাতে থাকা শক্তিশালী লেজার লাইটের রশ্মিও অসাবধানতাবশত গিয়ে লাগে পাইলটের চোখে।
পাইলটরা বলছেন, দৃষ্টিসীমার কারণে রাতে পাইলটদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। রাতে ল্যান্ডিংয়ের সময় যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কেবিন ক্রুরা ঘোষণা দেন সব লাইট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। একটি গাড়ির ভেতরের লাইট জ্বালিয়ে চালক রাতে কখনো গাড়ি চালাতে পারবেন না। কারণ গাড়ির ভেতর আলো জ্বললে চালক সামনের আলো ভালোভাবে দেখতে পান না। প্লেনও অনুরূপ।
২০১৯ সালের জুন মাসে লেজার নিয়ে একটি কড়া নির্দেশনা দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে প্লেন ওঠা-নামার সময় টার্গেট করে লেজার বিম প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে। এটি সিভিল অ্যাভিয়েশন অ্যাক্ট-২০১৭ অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাইলটের দিকে এভাবে লেজার প্রদর্শন প্লেন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা করে, যা ফ্লাইটকে অনিরাপদ করে। তাই একটি ফ্লাইট যাতে নিরাপদে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে সেজন্য সবাইকে লেজার বিম ছোড়া থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সতর্কও করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, লেজার লাইট নিক্ষেপকারীকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। যারা এ ধরনের কাজ করছেন তারা অনেকটা লুকিয়ে এবং বাসার সুউচ্চ ভবন থেকে করছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্লেন ল্যান্ডিংয়ের সময় নিয়মিত লেজার লাইট নিক্ষেপের সম্মুখীন হতে হয়। বেশিরভাগ পাইলট রাতে বাংলাদেশে ল্যান্ড করতে এলে এই সমস্যায় পড়েন। একজন পাইলটের চোখে হঠাৎ করে লেজার লাইট পড়লে কিছু সময় ওই পাইলট চোখে কম দেখতে পান।
যেসব এলাকা থেকে লেজার লাইট বেশি নিক্ষেপ হয়
রাজধানীর বাউনিয়া, উত্তরা, বিমানবন্দর রোড, নিকুঞ্জ, কুড়িল, সাভার ও আশুলিয়া থেকে বেশি লেজার লাইট নিক্ষেপ করা হয়।
প্লেনে লেজার লাইট নিক্ষেপে যে শাস্তি
বাংলাদেশের সংবিধানে ২০১৭ এর ধারা ২৬ অনুসারে প্লেন লক্ষ্য করে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ মর্মে গত বছরের ১৭ জুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেবিচক।
এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি প্লেন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে উচ্চক্ষমতার লেজার রশ্মি ব্যবহারে শাস্তির বিধান রয়েছে।