স্বপ্নের সেতুতে চড়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চললো। আর মাত্র একদিন পরই উদ্বোধন হচ্ছে দেশের ইতিহাসের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু। দিন-মাস-বছরের অপেক্ষা পেরিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নে উচ্ছ্বাসিত দেশের মানুষ।
আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। যার মধ্য দিয়ে লাঘব হতে চলেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আজন্ম কষ্ট। ঢাকার সঙ্গে পুরো দক্ষিণবঙ্গের সরাসরি এ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিপ্লব সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যেন কোন ধরনের নাশকতা বা অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য বাড়তি সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশজুড়ে সবকটি ইউনিটে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার জগতে যে কোন গুজব ঠেকাতে সেখানেও তৎপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট। যাদেরকে সাইবার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে সন্দেহভাজন কিছু দেখলে তাৎক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। উদ্বোধনের দিন পদ্মার দুই পাড়েই র্যাব-পুলিশসহ অন্তত পাঁচ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইউনিফর্মে মোতায়েন থাকবেন। এর বাইরে সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা সদস্যরা সেতুকে ঘিরে দুই পাড়েই তৎপর রয়েছেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের মাধ্যমে পুরো এলাকা সুইপিং করা হবে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দুইপাশেই প্রস্তুত থাকবে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে বিভিন্ন ইউনিটের হেলিকপ্টার টিম। নদীতে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ছাড়াও থাকবে বিভিন্ন ইউনিটের বুট পেট্রোলিং। এর বাইরে চেকপোস্ট, ফুট পেট্রোল ও কার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমেপুরো এলাকাজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
পুলিশেরএক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি রেঞ্জের অফিসারদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সতর্ক করা হয়েছে। ডিএমপি ও পদ্মা সেতুর আশেপাশের এলাকার প্রতিটি থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেসব এলাকায় অবস্থিত মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে বহিরাগত কেউ অবস্থান নিয়েছে কি-না নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর আশে-পাশের এলাকার বিভিন্ন সড়কে বিপুল সংখ্যক চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও দেখা গেছে। এছাড়া, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর টহল টিমগুলোর পুরো এলাকাতেই বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ এই উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে।
রোববার (১৯জুন) ডিএমপির অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুলইসলাম বলেন, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের সুষ্ঠু গমনাগমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে কেউ যেন কোন ধরনের নাশকতা করতে না পারে তা প্রতিরোধে আবাসিক হোটেল ও মেসে তল্লাশি জোরদার করতে হবে।
র্যাব কর্তৃক বিশেষ নিরাপত্তা
র্যাব জানায়, সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। সকল ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে থাকবে র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ইতোমধ্যে সেতুর দুই প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-১ ও সার্ভিস এরিয়া-২ সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমাবেশস্থল, টোলপ্লাজা, ফলকউন্মোচন ও হেলিপ্যাড এলাকার নিরাপত্তায় র্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠান চলাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিংরিজার্ভ, পেট্রোল,মোটরসাইকেল পেট্রোল, ফুটপেট্রোল, বোটপেট্রোলিং, অবজার্ভেশনপোস্ট, চেকপোস্ট এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
সেতুর দুই প্রান্ত, সমাবেশস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডসুইপিং করবে। যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকবে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম। পাশাপাশি, যেকোন পরিস্থিতিতে র্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোন ধরণের হামলা বা নাশকতার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই জানিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কোন ধরনের নাশকতার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিনা। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিদের যে কোন ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব । ভার্চ্যুয়াল জগতে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরণের গুজব ছড়ানো প্রতিরোধেও র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।