নামাজে 'আমিন' বড় ছোট করে পড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি অনর্থক, তা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন বায়তুশ শরফের পীর সাহেব শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী।
তিনি বলেন, বায়তুশ শরফ কোন বিতর্কের সঙ্গে নাই। ছোট করে 'আমিন' পড়লে নামাজ হবে। বড় করলেও হবে। এ নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে তারা ইসলামের ক্ষতি করছেন। এর কারণে
বিতর্কের সুযোগ নিবে বিধর্মীরা। ক্ষতি হবে ইসলামের।
ফরজ ওয়াজিব নয়, এমন খুটিনাটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী।
তিনি বলেন, কোটি টাকায় শান্তি নাই। আল্লাহর জিকির এর মধ্যেই ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিহিত।
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর উফাত দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার বায়তুশ শরফের বার্ষিক ইছালে ছওয়াব মাহফিল (ফাতেহা-এ-ইয়াজদহুম) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব সর্বশেষ প্রস্তুতি সভায় পীর সাহেব এসব কথা বলেন।
২৭-২৮ অক্টোবর (শুক্রবার-শনিবার) দুইদিন ব্যাপী মাহফিলে ইছালে ছওয়াব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জামে মসজিদে খতমে বোখারী, দোয়া-মোনাজাত, এন্তেজামিয়া কমিটির সভা ও আঞ্জুমানে নওজোয়ানের পৃথক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দুই দিনব্যাপী মাহফিলের শিডিউলের মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত খতমে কুরআন, খতমে সূরা আন-আম, খতমে খাজেগান, খতমে তাহলিল, খতমে বোখারী। সন্ধ্যা ৬টা থেকে জিকির মাহফিল, দস্তারবন্দী (হাফেজদের পাগড়ি প্রদান) অনুষ্ঠান। এরপর বিশিষ্ট আলেমগণ আলোচনা করবেন।
পরের দিন শনিবার (২৮ অক্টোবর) সালাতুত তাহাজ্জুদ, জিকির মাহফিল, মিলাদ, তওবা ইসতিগফার, বায়াত। সবশেষে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
বার্ষিক এই ইছালে ছওয়াব মাহফিলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকবেন রাহবারে বায়তুশ শরফ শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (পীর সাহেব, বায়তুশ শরফ)।
প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী মাহফিল উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটির দায়িত্বশীলদেরকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা আল্লাহ পাকের মুহাব্বতে তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কাজ করবেন। কাউকে দেখানোর জন্য নয়। তাহলে বরকত হবে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পীর সাহেব বায়তুশ শরফ বলেন, কোটি কোটি টাকার মাঝে শান্তি নাই। আল্লাহর জিকির এর মধ্যেই ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি রয়েছে।
তিনি গর্বের সাথে বলেন, বায়তুশ শরফের আকাবের পীর সাহেবরা সত্যিকারের দ্বীনদার ও হক্কানী আলেমে দ্বীন ছিলেন। বায়তুশ শরফ দরবারে কোন ধরনের খরাফাত বা ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ নেই। এখানে কোন ধরনের কারামতি দেখিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়না।
বায়তুশ শরফ দরবার হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র.) এর মানব সেবার তরিকা অনুসরণ করে চলছে। সারা দেশে বায়তুশ শরফ দরবার আজ দ্বীনদান হক্কানী আলেম ওলামা ও পীর মশায়েখদের কাছে গ্রহনযোগ্য দরবার।
মাহফিলে আগত মেহমানদেরকে উত্তমরূপে মেহমানদারী করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহবান জানান।
বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক ও মাহফিল উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এম এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হক স্বাগত বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, বোখারী শরীফ এর অনেক ফজিলত আছে। কোরআন শরীফের পরে বিশুদ্ধ কিতাব হচ্ছে বোখারী শরীফ। বোখারী শরীফের সব হাদিস বিশুদ্ধ। ৬ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে ইমাম বোখারী এখানে ৪০০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম এম সিরাজুল ইসলাম বায়তুশ শরফ জামে মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধন, জব্বারিয়া একাডেমীর ভবন নির্মাণ, কমপ্লেক্সের অধীনে শিক্ষা, চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি ইছালে ছওয়াব মাহফিলের সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মাহফিল বাস্তবায়নের জন্য ৩০টি সাবকমিটির কয়েক শত স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
খতমে বোখারী উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দেসিন ও অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম অংশ গ্রহণ করেন।
সভায় চকরিয়া সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল কুদ্দুস আনোয়ারী, কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত মুহাদ্দিস মাওলানা আতাউল্লাহ মোঃ নোমান, মুফতি মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, বড়বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা কামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকা ও প্রতিষ্ঠানের আলেমগন উপস্থিত ছিলেন।
ইছালে ছওয়াব মাহফিলে দ্বীনদার, ঈমানদার সকল মুসলমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এমএম সিরাজুল ইসলাম।