আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিন দশকের পেশায় নতুনের হাতছানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৪ জুন ২০২২ ০৯:৪৩:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌপথ মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট। একসময় প্রতিদিনই লাখো মানুষের পদচারণা ছিল এই ঘাটে। ধীরে ধীরে দিন বদলেছে। আর মাত্র দিন দশেক পরেই খুলে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পর সেতু ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার লোকজন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যাবেন। সেতু ঘিরে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোতেও। তবে এর প্রভাবে ব্যস্ততা কমছে বাংলা বাজার ঘাটে। আর লোকজনের আনাগোনা কমায় তিন দশকের পেশাও বদলে ফেলছেন ঘাটকেন্দ্রিক বিভিন্ন পেশার মানুষ। 

আগামী ২৫ জুন অপার সম্ভাবনার এই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা করার প্রস্তুতি চলছে। এই জনসভাটিও হবে এই বাংলাবাজার ঘাটে। সম্প্রতি সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। তিনি ঘাট এলাকা পরিদর্শনকালে বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তির সেতু। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে। এর ফলে দুটি নৌবন্দর মোংলা ও পায়রা এবং স্থলবন্দর বেনাপোলকে ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেললাইনও যুক্ত হওয়ায় চিন্তাই করা যাবে না কী ধরনের অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়বে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে পদ্মা সেতু। গড়ে উঠছে নানান শিল্প করখানা, সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। তবে স্বাভাবিকভাবেই পেশা বদলে ফেলতে হচ্ছে দীর্ঘদিনের চেনা ঘাটকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের। তবে এদের মধ্যে কিছু পেশার মানুষ অন্য সাধারণ কাজে অভ্যস্ত নন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা বা পুনর্বাসনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে তারা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দ্রুত পদ্মার পাড়ে মানুষের হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা করাসহ একটি পর্যটন এলাকা করার দাবি জানান।

বিশেষ করে ঘাট এলাকার দোকানদার, হকার, কুলি, হোটেল ব্যবসায়ী পেশা পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। শুক্রবার (১০ জুন) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, ফেরিঘাট এলাকা যানবাহন ও জনশূন্য। ঘাটে থাকা খাবার হোটেলের বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক দোকানপাট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দুই একটি চায়ের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। অনেকেই দোকানপাট অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।

 ঘাটের হকার ও স্থানীয়রা জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটকে ঘিরে যারা জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন হকার শ্রেণি ব্যবসায়ীরা। তারা লঞ্চ, ফেরিতে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের কাছে আখের রস, ঝালমুড়ি, ছোলা, সেদ্ধ ডিম, সিঙারা, নারকেল-চিড়া, শসা, দইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করতেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে প্রতিটি লঞ্চে তিন থেকে চার জন করে নানান জিনিস নিয়ে ওঠে খাবার বিক্রি করতেন তারা। ঘাটের পন্টুনে ঘুরে ঘুরেও খাবার বিক্রি করতেন অনেকে। ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রীই ছিল তাদের ক্রেতা।

বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটে কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, সেতু চালু হওয়ার খবর আনন্দের। তবে সেতু চালু হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ঘাটের ওপর নির্ভর করে যুগযুগ ধরে চলা এই ব্যবসা হঠাৎ করেই থেমে যাবে। এখানে অনেকেই আছে ৩০-৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। সব বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘদিনের পেশা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে। তবে এখনও বিকল্প পেশা নিয়ে চিন্তা তেমন করেননি বলে জানান তারা। এ অবস্থায় হকারদের পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।