আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টেকনাফে মানব পাচারচক্রের গ্যাং লিডার আটক

ইমাম খাইর, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : সোমবার ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৪০:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

 

টেকনাফের আলোচিত মাদক ও মানব পাচারকারী গ্যাং লিডার শাকের মাঝি (৪০)-কে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মুন্ডার ডেইল গ্রামের নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক শাকের মাঝি স্থানীয় কবির আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক, মানবপাচার ও অস্ত্রসহ ৪টি মামলা রয়েছে। অভিযানকালে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ সদস্য এএসআই শাখাওয়াত হোসেন আহত হয়েছেন। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, ওয়ারেন্ট তামিলকারী টিম পুলিশ পরিদর্শক ( অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক, এসআই নুরে আলম, এসআই হোসাইন, এএসআই সাখাওয়াতসহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং আত্মস্বীকৃত আত্মসমর্পনকারী মাদককারবারী মো. শাকের মিয়া প্রকাশ শাকের মাঝিকে গ্রেফতার করে। এ সময় আসামি শাকের মাঝি সন্ত্রাসী কায়দায় এএসআই মো. সাখাওয়াতকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে এএসআই সাখাওয়াতের ঠোট কেটে যায়। এ সময় আসামির ভাই মনু মিয়া (৪০) ও রফিকুল ইসলাম(২৯) পাশের রুম থেকে বের হয়ে পুলিশের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পুলিশকে আঘাত করে এবং পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে। তারপরও অভিযানকারী টিম আসামি শাকের মাঝিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও তার দুই সহোদরসহ অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে এবং আহত এএসআই মো. শাখাওয়াতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার ঠোঁটে ৩টি সেলাই দেয়া হয় বলেও জানান ওসি। মিয়ানমারে মানুষ বন্ধক রেখে মাদক পাচার করতো শাকের মাঝি : মাদকের উৎসস্থল মিয়ানমারে মাদক কারবারিরা মানুষ জিম্মি রেখে বাকিতে মাদক বিক্রি করছে এদেশীয় কারবারিদের কাছে। ঠিকমতো মাদক বিক্রির অর্থ পরিশোধ করলেই মুক্তি দেয়া হয় জিম্মিকে, অন্যথায় নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে ফের আলোচনায় আসে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাকের মাঝি। সে একই ইউনিয়নের বাহারছাড়া এলাকার আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মিয়ানমার মাদক কারবারিদের হাতে বন্ধক রেখে ১ লাখ ইয়াবা আনেন। যথা সময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে বর্বর নির্যাতন করা হচ্ছে এবং সে শাকের মাঝি টাকা পাঠাবে বলে ভুক্তভোগী তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। মিয়ানমার থেকে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের কাছে পাঠানো একটি ভিডিওতে এমন চিত্র দেখা যায়। একসময় মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা এদেশীয় মাদক কারবারিদের লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ বাকিতে বা অর্ধেক বাকিতে মাদক বিক্রি করতো। বিভিন্ন সময় এদেশীয় কারবারিরা মাদক এনে তা বিক্রি করে অর্ধেক পরিশোধ করে কখনো সম্পূর্ণ টাকা মেরে দেয়। এসব ঘটনার পর থেকে সে দেশের কারবারিরা বাকি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। আবার এদেশীয় কারবারিরা টাকা মেরে দেয়ার ভয়ে মিয়ানমারে অগ্রিম অর্থ লগ্নি করাও বন্ধ করে দেয়। এরকম একটি অবস্থায় মিয়ানমারের কারবারিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মাদকের চালান আনার সময় ক্যাশ টাকা না দিলে ক্রেতা মিয়ানমারে তাদের নিকট কোন নিকট জনকে বন্ধক রাখবে। পরে অর্থ পরিশোধ করলে ছেড়ে দেয়া হবে। অন্যথায় মেরেফেলা হবে। এই ঘটনার অনুসন্ধেনে নেমে এমন আরো কয়েকটি ঘটনা উঠে এসেছে। উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নুরুল আমিন (২২) তার ভাই আব্দুল্লাহ জানান, তার ভাইকে মিয়ানমারে কারেন্ট জাল আনার নাম করে নিয়ে ১১ লাখ টাকার ইয়াবার চালানের বিপরীতে বন্ধক রেখে চলে আসে একই এলাকার আলী হোসাইনের ছেলে শহীদ উল্লাহ। সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায় সেদেশের কারবারিরা। এর পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মগোপনে চলে যায়। এর আগে গত মার্চের শুরুতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে নুরুল ইসলামকে একইভাবে মিয়ানমারে বন্ধক রেখে ১০ লাখ টাকার ইয়াবা আনার অভিযোগ রয়েছে একই এলাকার আব্দুল খলিল এবং মহেশাখালী উপজেলার আবছারের বিরুদ্ধে । পরে নুরুল ইসলামকে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রচার পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অর্থ পরিশোধ করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে বন্দিদশা থেকে এসে সে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, ‘অপরাধীরা আগে পরে ঠিকই আইনের আওতায় চলে আসবে।’