টেকনাফে সম্প্রতি একটি এনজিওর দুই নারী কর্মীসহ ছয় কর্মীর উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় ৬০টি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওর নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করার পাশাপাশি আগামী সাতদিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে কোনও সিসিএনএফ’র সদস্য কোনও এনজিও কোন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে না বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পাশাপাশি অন্যান্য সকল স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহকে এই সিদ্ধান্তের প্রতি সংহতি জানানোর আহ্বান করে সিসিএনএফ।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফ’র কো-চেয়ার এবং পালস’র নির্বাহী পরিচালক আবু মুর্শেদ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে মূল ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন সিসিএনএফ’র সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম। এতে আরও বক্তৃতা করেন ইপসার নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, হামলার শিকার দুই নারী কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমী ও একই সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাহরিমা আফরোজ টুম্পা। এতে সমাপনী বক্তৃতা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের হৃীলার জেলে পাড়ায় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মারধর ও লাঞ্চিত করেছেন কোস্ট নামের এনজিওর ছয়জন কর্মীকে। কোস্ট দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন কর্শসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। একটি প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে মতামত সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি উঠান বৈঠক করার সময় হ্নীলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায় হয়। উঠান বৈঠক চলাকালে এনজিও কর্মীদেরকে আকষ্মিক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। তাঁকে কাজের ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে এনজিও কর্মীদের উপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে সবাইকে এলোপাথারি কিল ঘুষি ও লাথি মারে সন্ত্রাসীরা। তাদের চিৎকারে পার্শ¦বর্তী লোকজন এসে উদ্ধার করে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেয়। এনজিও সংস্থার আহত কর্মীরা টেকনাফ থানায় মামলা করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও দরিদ্র নারীদের জন্য নারী কর্মীদের কাজ করাকে সেই ইউপি সদস্য মানতে পারেন নি। এই ঘটনা কক্সবাজারে কর্মরত শত শত নারী কর্মীর জন্য ভীষণ একটি হুমকি। তাহরিমা আফরোজ টুম্পা বলেন, নারীদের উপর এই আক্রমণের এই ধরণ কল্পনাতীতভাবে ন্যাক্কারজনক, আমি এর বিচার চাই।
ইপসার নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, আমরা এই ঘটনার দ্রুত আইনী প্রতিকার চাই। আমার মনে হয়, রোহিঙ্গা কর্মসূচির অংশ হিসেবে টেকনাফ-উখিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে এটি পরিকল্পিত হামলা। কারণ এনজিওরা সরকারের সহযোগী হিসেবেই দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আবু মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে শত শত এনজিও কর্মী দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষকে নানা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের উপর এই ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা অনভিপ্রেত। এটি কোনও একটি মাত্র এনজিওর কর্মীদের উপর হামলা নয়, পুরো এনজিও সেক্টরের উপর হামলা। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করি। আগামী সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সিসিএনএফ’র সকল সদস্য সংস্থা হ্নীলা ইউনিয়ন থেকে তাদের কার্যক্রম প্রত্যাহার করে নেবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এনজিও ও সুশীল সমাজের কর্মীরা মানুষের দারিদ্র বিমোচন, আয় বৃদ্ধি, পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণ, নারীর উন্নয়নে কাজ করে। তাঁদের উপর হামলা করেছে তারাই যারা মানুষের উন্নয়ন চায় না, যারা নারীর উন্নয়ন চায় না, যারা শিক্ষার বিস্তার চায় না। তারা চায় না মানুষ সচেতন হোক। কারণ, মানুষ শিক্ষিত হলে, মানুষ সচেতন হলে সেই গোষ্ঠীটির অন্যায়-অবৈধ কার্যক্রমের জন্য সেটা হুমকি হয়ে যায়। কোস্ট কর্মীদের উপর হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা না গেলে, শত শত নারী কর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে আর এতে রোহিঙ্গা কর্মসূচিসহ সকল উন্নয়ন কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়তে পারে।