উপজেলা ভিত্তিক জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ততা নিয়ে একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক হল জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। উদ্যোগটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মাননা প্রদান করার কথা থাকলেও সন্দ্বীপের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জীবন বৃত্তান্ত সহ নামের তালিকা চাওয়া হলে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ৪টি আবেদন জমা পরে। প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্তগুলো পর্যালোচনা করে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ এর সন্দ্বীপে চার ক্যাটাগরিতে জয়িতা নির্বাচন করেন সন্দ্বীপ উপজেলা কমিটি। যার মধ্যে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী ক্যাটাগরীতে
সন্দ্বীপ পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ডের নারী মোমেনা বেগম (৩৪)। ২০০৭ সালে এস এস সি পাশ করার পর পারিবারিক অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারে নি। ২০১০ সালে বিয়ে হয় মোমেনার, বিয়ের পর দিন থেকে স্বামী ৩ লক্ষ টাকার যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে, পরিবারে নেমে আসে অশান্তি, মোমেনা এতে অপারগতা করলে স্বামী হাতের কাছে যা আছে তা দিয়ে মারধর করতে থাকে। স্বামী প্রতিদিন নেশা করে বাড়ি ফিরে, আবার মারধর করে এমনকি শীতের মধ্যে মোমেনাকে বাহিরে দাড় করিয়ে রাখে। স্বামীর এসব নির্যাতন সয্য করতে না ফেরে বাদ্য হয়ে তার বাবাকে বলে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণের মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করে স্বামীকে দেয়। সে টাকা দিয়ে মোমেনার স্বামী বিদেশে চলে যায়। বিদেশ যাওয়ার পর থেকে আর মোমেনার খোঁজ খবর নেয় না স্বামী, এমনি ভরণ পোষণ ও দেয় নি, এর মধ্যে ২০১১ সালে তার ঘরে জম্ম নেয় ছেলে সন্তান, ছেলের জম্মের পর তার তার খবর ও নেয় না। তার স্বামী বিদেশে যান ১১ সালে দেশে আসেন ১৬ সালে দেশে এসে আবার নেশাগ্রস্ত হন স্বামী এবং অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হন। মোমেনা তাতে বাধা দিলে আবার নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে ১৭ সালে আবার বিদেশ যাওয়ার জন্য মোমেনার বাবার কাছে এক এক লক্ষ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মোমেনা এ টাকা আনতে পারবে না বললে তাকে তালাকের হুমকি দেন। ১৭ সালে মোমেনা সন্তানের কথা চিন্তা করে তার বাবাকে বলে আবার ঋন করে এক লক্ষ টাকা যোগাড় করে তার স্বামীকে দেন। পরে তার স্বামী আবার বিদেশ চলে যায়। এর পরে স্ত্রী সন্তানের আর কোন খোঁজ খবর নেয় না। এর মধ্যে মোমেনার বাবা মারা যায়, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মোমেনা এক রকম অসহায় হয়ে পড়ে। মোমেনা তার স্বামীকে দেশে আসতে বললে তার স্বামী জানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। মোমেনা কোন উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে নিজে কিছু একটা করার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে টেইলারিং এর ব্লক বাটিক প্রশিক্ষ গ্রহন করে। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋন নিয়ে ব্লক বাটিকের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। পরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষক করে বার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রি করে মাসে দশ হাজার টাকার মতো আয় করেন। মোমেনা এসব কাজের পাশাপাশি বর্তমানে সোনালী লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি সন্দ্বীপ টাউন শাখায় ডেস্ক ম্যানোজার হিসাবে চাকুরী করছে। মোমেনা এ প্রতিবেদক কে আরো জানায় বর্তমানে আমার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। যেহেতু স্বামীর সাথে বনি বনা নেয় এবং খোজ খবর নেয়া না এ মানসিক নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে গত বছর আমার স্বামীকে আমি ডির্ভোস দিয়েছি। এবং পূর্বের তুলনায় আমি অনেক ভাল আছি, আমাকে যারা আমার দুর্দিনে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এসব বিষয়ের উপর আবেদনের পরিপেক্ষিতে গত ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারি নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে জয়িতা সম্মাননা হিসাবে ক্রেষ্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করে মোমেনা কে।