জনগণের আশীর্বাদেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন।গতকাল শেরেবাংলানগরে এনইসির সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীসহ একনেক সভায় ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়ে গেল। সেতু বাস্তবায়নে নানা স্ট্রাগল ও চাপের বিষয়ে একনেক সভায় খোলামেলা আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, জনগণ পাশে ছিল। তাদের আশীর্বাদ ছিল বলেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশের ভিতরের-বাইরের অনেক প্রতিকূলতা ছিল বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বিষয় আমাদের সঙ্গে তিনি শেয়ার করেছেন। এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কাজটা করতে পেরেছি। এটা নিয়ে তিনি আনন্দে আপ্লুত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অনেক বড় বড় অর্জন আছে। তবে পদ্মা সেতু একটি অন্যতম বড় অর্জন। প্রতিটি স্থলবন্দর আরও উন্নত করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক স্থাপনা ও সিস্টেম বসাতে হবে। গ্রামীণ সড়ক বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন সড়ক বানানো প্রয়োজন। তবে বিদ্যমান সড়ক আগে সংস্কার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দুই বছর পর একনেকে সশরীরে বুধবার উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সভায় উপস্থিত হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনেক গল্প করেছেন। বিস্তারিত অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত হয়েই একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন। করোনা মহামারির কারণে এতদিন তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ সভায় সভাপতিত্ব করতেন। সভায় সরকারি-বেসরকারি যে কোনো গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী নোটিস দেওয়ার পরও বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ কেটে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন বলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান। তিনি বলেন, এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের আধুনিকায়ন বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় কথা উঠেছিল বিদ্যুতের বিল বকেয়া নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। নোটিস দেন, যদি পাওনা না দেয় সংযোগ কেটে দেন। আর কত, হাজার হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। ‘সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন’, বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান।
নয় প্রকল্প অনুমোদন : ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২ হাজার ৬৬৫ দশমিক ২১ কোটি টাকার মোট নয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন, বাকিগুলো সংশোধিত প্রকল্প। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধাপে ধাপে দেশের সব স্থল-বন্দরকে আধুনিকায়ন করতে নৌ-মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আট বিভাগের জন্য আমরা আটটা টিম করে দিয়েছি। সমগ্র দেশ তারা সফর করছে এবং সম্মেলনগুলো করছে। এই সম্মেলনগুলো আমরা তৃণমূল থেকে করে আসছি, যাতে করে আমাদের সংগঠনটা শক্তিশালী হয়। গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আমরা তা ভুলে যাই না। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করেছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি। নিজের অর্থে সেই সেতু করেছি। ২৫ জুন উদ্বোধন করব, ইনশাআল্লাহ।
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে বললেন উপদেষ্টারা : দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। একটি গোষ্ঠী লাশের রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার পরামর্শ দিলেন আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টা গণভবনে বৈঠক শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান, মোজাফফর হোসেন পল্টু, দুর্গা দাশ, অ্যাম্বাসেডর জমির, ড. হোসেন মনসুর, খন্দকার গেলাম মওলা নক্সবন্দীসহ ২১ জন অংশ নেন।