ভ্যাপসা গরমে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে।
এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।
নগরের স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, কাজির দেউড়ী, কর্ণফুলী মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ অস্থায়ী বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা-পাকা তাল।
আগের সেই মিষ্টি গন্ধ না থাকলেও ছোট-বড় তালের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা।
কচি তালের শাঁস ও পাকা তাল বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে।
তালে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিজেন ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানসহ অনেক খনিজ উপাদান। পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে আছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি .১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।
শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এক কুড়ি তালের শাঁসের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা আর এক কুড়ি আস্ত তাল ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমি এ ফল কেউ কিনে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন, কেউবা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
একসময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, পটিয়া এলাকায় সারি সারি তালগাছের দেখা মিলতো। কিন্তু এখন নির্বিচারে গাছ নিধনের ফলে তালগাছও হারিয়ে যাচ্ছে। যে কয়টি গাছ এখনও সংগ্রাম করে টিকে আছে, সেগুলোর ফল পাকার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
নগরে বর্তমানে কুমিল্লাসহ দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তাল বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানান কারণে তাল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে আনতে পরিবহন খরচও বেশি। সেই তুলনায় পাকা তালের দাম অনেক কম।
পুষ্টিবিদদের মতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ তাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তালের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধক। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ নিরাময়েও আছে এই ফলের ভূমিকা।
দুই নম্বর গেট এলাকায় কথা হয় তাল বিক্রেতা ইলিয়াছের সাথে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার কাছে তালের শাঁস প্রিয়। আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেই অনেকে এটি কিনে খায়। বাজারে এর কদরও বেশি। মহল্লায় ভ্যানে নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া সেই তালের পিঠা বানায় অনেক গৃহিণী। এছাড়া নতুন প্রজন্মকে তালের পিঠা-পুলির স্বাদ দিতে কেউবা কিনছেন এই ফল। কেউ তালের রস ও চিনি দিয়ে বানাচ্ছেন তালসত্ত্ব। এটি রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়া যায়।
অনেকে ভাত ও দুধের সঙ্গেও এই তালসত্ত্ব খেতে পছন্দ করেন। কেউবা পাকা তালের ক্বাথ উনুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করে খেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে নারকেল, দুধ, চিনি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করেন নানান পদের খাবার।
পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ এই গাছ উচ্চতায় ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূলত পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসে। তারপর আসে ফল। শ্রাবণ মাসে তাল পাকতে শুরু করে।
এনায়েত বাজার এলাকার গৃহিণী মায়মুনা খাতুন বলেন, তালের ক্বাথ, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তালের ঘন নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি ও নারিকেলের কুচি দিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে তাল কেক বানানো হয়।
তিনি বলেন, তালের কেক হৃদরোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে। এছাড়া তালের সেঁকা পিঠা তৈরি করা যায় তালের ক্বাথের সঙ্গে চিনি, দুধ, নারিকেল মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে তার সঙ্গে চালের গুঁড়া বা আটা মিশিয়ে। এরপর কলাপাতায় খামির রেখে চুলায় সেঁকে নিয়ে খাওয়া যায়। তালের রুটি, পায়েসও মজাদার খাবার।
পিঠা তৈরি করে নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে পাঠানোর রেওয়াজ চালু আছে এখনও। প্রথা মেনে মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে অনেকে পাঠিয়ে থাকেন এই তালের পিঠা।