সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ওসব এলাকা থেকে পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দুই উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। এজন্য পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সাময়িক অলস সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, রুমা ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) থেকে দুই উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সন্ত্রাস নির্মূলে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। এ কারণে থানচি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদর এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলেও পর্যটক নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে জেলা সদরের মেঘলা ও নীলাচলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ার খবর শুনে তাদের মনেও ভয় কাজ করেছিল। দুপুরের পর তারা বাড়ি ফিরে যান। বিকালে এসব কেন্দ্রে কোনও পর্যটক দেখা যায়নি।
সকালে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে দেখা হয় নোয়াখালী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্ধুবান্ধব মিলে ১৫ জন ১০ দিনের জন্য বান্দরবানে ঘুরতে এসেছি। ইচ্ছা ছিল, দেবতাখুম ও বগালেক ঘুরে দেখবো। কিন্তু এই দুই স্পটে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় যাওয়া হচ্ছে না। তাই আশপাশের কয়েকটি স্থানে ঘুরে বিকালে গন্তব্যে ফিরে যাবো।’
এদিকে, পর্যটক না থাকায় পর্যটকবাহী জিপগুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। অসল সময় পার করছেন জিপচালকরা।
জেলা জিপ-মাইক্রোবাস চালক সমিতির সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটক না থাকায় একটি ভাড়াও পাইনি। গত কয়েকদিন অলস সময় পার করছি। এরপরও আমরা চাই, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে পর্যটককেন্দ্র ও পাহাড়ি এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত করুন যৌথবাহিনী। আমরা নিরাপদে থাকতে চাই।’
হোটেল হিলটনের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দীন সিদ্দিকী বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হোটেলের ৭২ কক্ষের মধ্যে ৭১টি খালি পড়ে আছে। শুধুমাত্র একটি কক্ষ বুকিং হয়েছে। যারা আগাম বুকিং নিয়েছিলেন তারাও টাকা ফেরত নিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বুকিং নেওয়া হবে।’
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে উপজেলা প্রশাসন। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি প্রশাসন। হোটেল-মোটেলে কোনও পর্যটক নেই। সবগুলো হোটেল-মোটেল খালি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চলা যৌথবাহিনীর অভিযান দ্রুত শেষ হোক—এটাই আমাদের চাওয়া। বিধিনিষেধ তুলে নিলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘যৌথবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায়। ফলে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে রুমা ও রোয়াংছড়িতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। তবে স্থানীয়দের জন্য চলাচল উন্মুক্ত রয়েছে।’