বাংলাদেশের রবি মৌসুমের ফসল গুলোর মধ্যে সরিষা একটি অন্যতম ফসল। আর এই ফসলটি চাষ করার সঠিক সময় হচ্ছে মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রায়নের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) মাস পর্যন্ত। তবে সরিষা চাষে একটু ভিন্নতা আছে। জমিতে অন্য ফসল চাষাবাদ করতে যে পরিশ্রম হয়, ভালো ফলনের জন্য তার চেয়ে একটু বেশি নজর দিতে হয় এই সরিষা চাষে। কেননা সরিষার বীজ আকারে ছোট হওয়ায় জমিতে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করে নিতে হয়। শুধু তাই নয়, জমিতে যাতে বড় বড় মাটির ঢেলা ও আগাছা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।ফুল আসার পূর্বে একটি পানি সেচ প্রদান করলে ফলন তুলনামূলক ভাবে অনেক ভালো হয়। আর সরিষা চাষে মূলত যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হয়। সেটি হল আবাদি জমির মাটি নির্বাচন। সরিষা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো বেলে-দোআঁশ এবং দোআঁশ মাটি। কেননা এসব মাটিতে সরিষা বপন করলে অনেক ভাল ফলন পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় অনুকূল আবহাওয়া হওয়ায় আর রোগবালাই কম থাকায় ভালো হচ্ছে সরিষার আবাদ। মৌ-মৌ সুগন্ধে হাসি ফুটতে শুরু করেছে কৃষকের মুখে। কারণ সরিষাক্ষেতে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। সুন্দর বীজও আসতে শুরু করেছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। অন্যদিকে এবছরও সরিষার আবাদ ভালো হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে প্রায় ৫১.০ হেক্টর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে সরিষার। প্রতিবছর অল্প কিছু সংখ্যক জমিতে সরিষা চাষ হলে ও এবছর নতুনভাবে কৃষকেরা বেশ কিছু চাষ শুরু করেছে সরিষার আবাদ। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হওয়ায় দ্রুত বেড়ে উঠেছে সরিষার গাছগুলো, আরো কিছু দিন পরেই শুরু হবে জমি থেকে সরিষা তোলার কাজ। এদিকে ভালো ফলনের সম্ভাবনায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। হাশিমপুর ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার, মোঃ দেলোয়ার হোসেনের অনুপ্রেরণায় হাশিমপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষি ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বদিউল আলম সওদাগর বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অল্প অল্প করে সরিষা চাষ শুরু করি, এবছর বাজারে সরিষার ভালো দাম থাকার কারণে আমি প্রায় ১০০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছি, গাছে ফলন ও বেশ ভালো আশা করছি এবার ভালো লাভবান হবো। এতে আমার জমির যেমন উর্বরতা বাড়বে তেমনি আমি আমার জমি থেকে উৎপাদিত সরিষা দিয়ে পরিবারের তেলের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। গতবছর বীজ হিসেবে প্রতি কেজি সরিষা (১৩০-১৫০) টাকায় এবং তেল ভাঙানোর কাজে ব্যবহৃত সরিষা (৮০-৯০) টাকায় পাইকারী মূল্যে বিক্রি হয়েছে, এবছর বাজারে সরিষার ভালো চাহিদা রয়েছে। তাই আশা করছি, আরোও বেশি দামে বিক্রি করতে পারবো। এদিকে কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে মাঠপর্যায়ে নানা ধরনের সহায়তার মধ্যে রাজস্ব খাত হতে বীজ সহায়তা, এডিপি এর প্রদর্শনীর মাধ্যমে সার ও বীজ সহায়তা, স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত প্রদর্শনী বরাদ্ধ, ফলোআপ বীজসহায়তা এবং নোয়াখালী প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান চন্দনাইশ উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার,কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার। তিনি আরোও বলেন, কৃষকদের যথার্থ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগের সহায়তায় চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষার আবাদ এবং উৎপাদন দুইটাই বেড়েছে। গতবছর চন্দনাইশে সরিষার আবাদ হয়েছিল ২৫.০ হেক্টর যা এবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১.০ হেক্টর আর গতবছর ২৫.০ হেক্টর জমিতে সরিষার উৎপাদন হলেও এবছর ৫১.০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা চাই তেল আমদানী নির্ভর না হয়ে এলাকার কৃষক যাতে তাদের নিজেদের উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল পরিশোধন করে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিক্রি করে লাভবান হয়। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোঃ ইসতিয়াক আহমদ আরিফ বলেন আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সরিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের সমন্বয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য সরকার তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ সাড়ে ১৮ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সাড়ে ২৬ লাখ টন সরিষার তেল উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে দেশের ২৫০ উপেজলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ বছর সরকার তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়।