আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পেশাদার ৪ সাংবাদিক আসামি

চকরিয়ায় নিহত ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের :৮ হাজার আসামি, গ্রেপ্তার আতংকে সাধারণ মানুষ

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৭ অগাস্ট ২০২৩ ১০:২৭:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

জামায়াত নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নামাজ ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংর্ঘষে গোলাগুলি ও নিহতের ঘটনায় চকরিয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে।

বুধবার রাতে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো: আল ফোরকান বাদি হয়ে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাঁধা দিয়ে তাদের উপর হামলার অভিযোগে (পুলিশ এসল্ট) একটি মামলা ও ঘটনায় সংঘর্ষের সময় পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসকের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরো একটি মামলা করা হয়েছে।

এ দুইটি মামলার এজাহারে ৭৫ জন করে ১৫০ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২ থেকে ৩ হাজার করে দুই মামলায় ৬ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাযেরকৃত দুই মামলায় চকরিয়া কর্মরত ৪ পেশাদার সাংবাদিককেরা আসামী হয়েছেন। তারা হলেন, দৈনিক মানবকন্ঠের চকরিয়া প্রতিনিধি আবদুল মজিদ, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার চকরিয়া উপকূল সংবাদদাতা এ এম ওমর আলী, দ্যা ডেইলি ইন্ড্রাস্টি ও কক্সবাজার সংবাদ পত্রিকার চকরিয়া প্রতিনিধি একেএম বেলাল উদ্দিন, আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার চকরিয়া প্রতিনিধি একেএম ইকবাল ফারুক। এরই

মধ্যে ওমর আলী চকরিয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি।

অপরদিকে, ঘটনায় সংর্ঘষের সময় গুলিতে নিহত ফোরকানুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম বাদি হয়ে বুধবার বিকালে চকরিয়া থানায় ২ হাজার ২শত অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু করেছে।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা ঘিরে সংর্ঘষের ঘটনায় চকরিয়া থানায় পৃথক ভাবে তিনটি মামলা রুজু করা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামিকে আটক করা হযনি বলে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গাযেবানা জানাযা নামাজ কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায়

পুলিশের দাযেরকৃত মামলায় কর্মরত পেশাদার ৪ সংবাদকর্মী আসামি হওয়ায় বিষয়ে ক্ষেপেছেন পুরো সাংবাদিক মহল। এতে নিন্দার ঝড় উঠেছে জেলাজুড়ে। অপরদিকে, চকরিয়ায় সংর্ঘষ ও নিহতের ঘটনায় থানায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু হওয়ার পরে ৮ হাজার অজ্ঞাতনামা

আসামি করার খবর পেয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে। তবে, মামলার কারণে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক লোকজন অনেকেই গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান।

 

সাংবাদিক একেএম ইকবাল ফারুক বলেন, ঘটনার সময় ৫জন সহকর্মী সাংবাদিকসহ আমরা একটা দোকানে বসে চা-খাচ্ছি। ওই সময় শুনতে পেলাম সংঘর্ষের ঘটনার কথা। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছি। কখনো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। রাজনৈতিক মামলায় রাজনৈতিক নেতারা আসামি হচ্ছেন, সেখানে সাংবাদিক টেনে আনল পুলিশ।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকালে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নামাজে বাঁধা দিতে এসেছে এমন গুজবের জেরধরে  চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা বায়তুশ শরফ রোড়ে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি ও হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্তের গাড়িতে হঠাৎ হামলা ও ভাংচুর চালায়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও অতি উৎসাহী জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এসময় ইট পাটকেলের আঘাতে থানার ওসি জাবেদ মাহমুদসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। এতে হামলা ও সংঘটিত  ঘটনায় একপর্যায়ে মুখোশধারী কিছু লোক এসে ঘটনাস্থলে সংর্ঘষে জড়িযে গোলা গুলির ঘটনা ঘটে। ওইসময় জানাযা নামাজ শেষে ফেরার পথে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহত ফোরকানুর রহমান চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারীপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।

 

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, হামলার ঘটনায় পুলিশের এসআই মো: আল ফোরকান বাদি হয়ে দুটি মামলা ও নিহতের স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বুধবার চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।

 

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বর্তমানে  চকরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো রয়েছে। যেকোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছে। 

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন বলে তিনি জানান।