আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কারিতাস বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

‘কারিতাস বাংলাদেশ: ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথ চলা’ এ মূলসুর নিয়ে বেসরকারি সংস্থাটি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় নগরের বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল সৈকতে আনন্দঘন পরিবেশে সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধন করা হয়।

নভেম্বর থেকে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত বছরব্যাপী সারা দেশে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে কারিতাস বাংলাদেশ।  

সকালে সুবর্ণজয়ন্তীর শোভাযাত্রা পাথরঘাটার সেন্ট প্লাসিডস্ হাইস্কুল ও কলেজ মাঠ হতে শুরু হয়ে হোটেল সৈকত প্রাঙ্গণে শেষ হয়। এরপর দুপুর ১টা পর্যন্ত নানা ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী দিন উদযাপন করেন কারিতাস কর্মীরা। জাতীয় পতাকা ও কারিতাস পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন সহকারে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উন্মুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ, ফটো গ্যালারি উন্মোচন, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা ছিল কর্মসূচিতে।

স্বাগত বক্তব্যে কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক সেবাস্টিয়ান রোজারিও ৫০ বছরের ধারাবাহিকতায় মানুষ ও দেশের উন্নয়নে কার্যক্রমের ধারা আরো বেগবান করার অঙ্গীকার করেন।  

প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদানের জন্য কারিতাসের প্রশংসা করেন।  

কারিতাসের ভালো কাজগুলো নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কারিতাসের সফল অর্জন ও উদ্যোগগুলো অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য গাইডলাইন হতে পারে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও মানব ভ্রাতৃত্ব সম্প্রসারণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।  

কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি অব অনার ছিলেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ, ওএমআই। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি, আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সিএসসি, ব্রাদার লরেন্স ডায়েস সিএসসি, ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, ভারতের আগরতলার বিশপ লুমেন মন্তেরো সিএসসি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সব কাথলিক বিশপ উপস্থিত ছিলেন।

 

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি বলেন, কারিতাস বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলী ও দেশের জন্য এক মূল্যবান উপহার।  আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ, ওএমআই বলেন, কারিতাস জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সেবা দিয়ে থাকে। এ সেবা হলো ভালোবাসাপূর্ণ যা মানব সম্প্রীতি তথা মানব ভ্রাতৃত্ব সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।  

বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী বলেন, জুবিলির কথা বললে দুটো বিষয় আমাদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে- একটি অতীত, অন্যটি বর্তমান। কারিতাস দীর্ঘ ৫০ বছর মানবকল্যাণে, মানব উন্নয়নে এবং হতদরিদ্র মানুষের জীবন পরিবর্তনে কাজ করে এসেছে ও করে যাচ্ছে।  

ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও বলেন, এ এক গৌরবময় মুহূর্ত, আনন্দের ও উদযাপনের ক্ষণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সামাজিক দুর্যোগের প্রতিও সাড়া দেওয়া দরকার।

 

অনুষ্ঠানে কারিতাসের ৫০ বছরের অর্জনের ইতিহাস সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন কারিতাসের পরিচালক (কর্মসূচি) জেমস্ গোমেজ।  শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কারিতাসের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) যোয়াকিম গমেজ, আঞ্চলিক পরিচালক সুক্লেশ জর্জ কস্তা। অনুভূতি জানান সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, বেবী রাণী দে, নোমান উল্লা বাহার, পিটার বাড়ৈ প্রমুখ।

বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কারিতাস বাংলাদেশ। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা অফিস হিসেবে কারিতাসের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণের সাহায্যার্থে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশে চিটাগাং অর্গানাইজেশন ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (কর্ড) নামে সংস্থাটি গঠিত হয়। কিছু দিন পর সংস্থাটি খ্রিষ্টান অর্গানাইজেশন ফর রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (কোর) নামে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৩ জানুয়ারি এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় অর্থাৎ ঢাকায় প্রধান কার্যালয় স্থাপনসহ সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনার রূপরেখা তৈরি হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুন সদ্য স্বাধীন দেশের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে এবং একটি জাতীয় সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  

বর্তমানে রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে রয়েছে কারিতাসের প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক কার্যালয়গুলো হচ্ছে- বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট। এসব কার্যালয়ের মাধ্যমে দেশের ৫৩ জেলার ১৮৭টি উপজেলায় কারিতাস কাজ করছে। কারিতাসের বর্তমান প্রকল্প সংখ্যা ১১২টি, ট্রাস্ট রয়েছে তিনটি এবং সুফলভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ মানুষ।

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়