পর্যটন শহর কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। সাধারণ একটি রেস্টুরেন্টে শুধু ডাল-ভাতের দাম রাখা হচ্ছে ৪০০ টাকা। এক প্লেট ভাত ও আলুভর্তার দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা।
পাশাপাশি শহরের অটোবাইক ও রিকশাচালকরাও দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। তবে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
টানা তিন দিনের ছুটিতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটন স্পটগুলোতে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি গলাকাটা বাণিজ্যে মেতেছেন। হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট এবং পরিবহনগুলো আদায় করছে ইচ্ছামতো ভাড়া। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সচেতন মহল।
সরেজমিন দেখা গেছে, হোটেল-মোটেলগুলোর রুম ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। প্রতিটি হোটেলে প্রকাশ্যে এসব ভাড়া আদায় করা হয়। আগে যে রুম ভাড়া এক থেকে দুই হাজার টাকা ছিল, তা এখন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
একইভাবে পরিবহন, খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছে। বিশেষ করে শহরের কলাতলী মোড় থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও রিকশা ভাড়া জনপ্রতি পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা আদায় করা হয়। যদি কেউ একা যান তাহলে ৩০-৪০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা নিচ্ছেন ১০০-১৫০ টাকা।
একশ্রেণির ইজিবাইক চালক পর্যটক দেখলেই দ্রুত পাশ কাটিয়ে যান। পরে কৌশলে গাড়িতে তোলেন। ‘অনেক দূরের পথ’ এমন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে আদায় করছেন অতিরিক্ত ভাড়া।
সুমাইয়া আক্তার ও মহসীন পারভেজ ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন গতকাল বুধবার। এখানে এসে খাবারের সমস্যায় পড়েছেন তারা। সুমাইয়া ও মহসীন জানান, দুপুরে কোরাল রেস্টুরেন্টে এক প্লেট ভাত আর আলুভর্তার দাম রেখেছে ৩০০ টাকা। দুই পিস কোরাল মাছের দাম রেখেছে ৭০০ টাকা।
হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা
একই কথা বলেছেন রাজশাহী থেকে আসা চৌধুরী শফিকুল ইসলাম। তিনি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এসে পড়েছেন বেকায়দায়। তার ভাষ্য, যে হোটেলে রুম বুকিং দিয়েছি সেটি কোনও রকমের। বুকিং নেওয়ার সময় বলেছিল থ্রি স্টার মানের। কিন্তু এসে দেখি সাধারণ হোটেলের চেয়েও খারাপ। সন্ধ্যার পরপরই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। কষ্ট করে আছি।
সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া ‘কয়লা রেস্টুরেন্ট’। এই রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পর্যটকদের।
বেড়াতে আসা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সোহেল আরমান বলেন, ‘শুধু গলাকাটা বললে কম হবে, রীতিমতো আশ্চর্য হয়েছি। কয়লা রেস্টুরেন্ট সাধারণ মানের। অথচ এক বাটি মুগ ডালের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে ৩০০ টাকা। এক প্লেট ভাতের দাম ৫০ টাকা। শুধু ডাল-ভাতই নয়; সব কিছুর দাম গলাকাটা।’
শহরের অটোবাইক ও রিকশাচালকরাও দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কোরাল কিংবা কয়লা রেস্টুরেন্ট নয়, জেলার হোটেল-মোটেল, জোন, বিচ এলাকা, ইনানী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যে চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে, অধিকাংশে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা।
হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম।
পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটন স্পটগুলো
তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশিই থাকে। তবে যেসব হোটেল মালিক মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে আমরা অভিযোগ দেবো। পাশাপাশি খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এতে পর্যটকদের বাড়তি টাকা গুনতে হয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে জানাবো।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যেখান থেকেই অভিযোগ আসবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেবো। আশা করি, পর্যটকরা নিরাপদে সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পট উপভোগ করতে পারবেন। এ জন্য কাজ করছে আমাদের একাধিক টিম।