আজ রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ই আশ্বিন ১৪৩১
আজ ফটিকছড়ির লেলাং গণহত্যা দিবস

ঈদের দিনে ২৯জনকে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনী

সালাহউদ্দিন জিকু, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪০:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

আজ ২১ নভেম্বর ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশিয় দোসর রাজাকারদের সহযোগিতায় লেলাং ইউনিয়নের গোপালঘাটা ও শাহনগর গ্রামে হানা দিয়ে ২৯ জন নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন ছিল মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। হানাদারদের আক্রমণে ঈদের আনন্দ মাটি করে দিয়ে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। দেশ মাতৃকার মুক্তির সোপানে যারা সেদিন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাদের নামটিও শহীদের তালিকায় এখনও স্থান পায়নি। যা ভাবলে সেসব শহীদের স্বজনদের মনে আজও পীড়া দেয়। 

 

খোজ নিয়ে জানা যায়, ২১ ও ২২ নভেম্বর ফটিকছড়ির লেলাং ও কাঞ্চন নগর গণ হত্যা দিবস। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলো উদাসীন ভূমিকা পালন করছে। এনিয়ে সচেতন মহলের ক্ষোভের সীমা নেই।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ কালে পাক-সেনারা নাজির হাট কলেজ ও রেল ষ্টেশন দখলে নিলে বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধারা ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতিরোধ ক্যাম্প গড়ে তোলে। তৎমধ্যে লেলাং ইউনিয়নের শাহনগর গ্রাম অন্যতম। ১৯৭১ সালে ২১ নভেস্বর মুসলিমদের

ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদের নামাজ শেষে বাঙ্গালী মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই যখন ঈদের আনন্দ ভাগা-ভাগি করছিল। তখন পাক-বাহিনী এ দেশীয় দোষর রাজাকারদের সহায়তায় সাদা পোষাকে শাহনগর নাথ পাড়া সহ আশ-পাশের পুরো এলাকা ঘিরে সাধারণ জনতাকে মুক্তিযুদ্ধাদের খোঁজ দিতে বলে । কেউ যখন বাঙ্গালী মায়ের দামাল ছেলেদের খোঁজ দিচ্ছে না তখন গণ ধর্ষণ, লুণ্টন, নির্যাতন চালায় তারা।

সুঠাম দেহের ছাত্র-যুবক-বৃদ্ধ-বনিতাদের বেচে-বেচে ১৭ পরিবারের ২৯ জন বাঙ্গলীকে পাশ্ববর্তী ছড়ার কুলে নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে ব্রাশফায়ার

করে হত্যা করে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয় শহীদ মোঃ জহুরুল ইসলাম, শহীদ মোঃ ইউনুছ, শহীদ মোঃ জমিল উদ্দিন, শহীদ নুর মোহাম্মদ, শহীদ মোঃ

এয়াকুব, শহীদ মোঃ নুরুল আলম, শহীদ তোফায়েল আহম্মদ, শহীদ রুহুল আমিন, শহীদ

ফয়েজ আহমেদ, শহীদ জাগের আহমেদ, শহীদ আবছার আহম্মদ, শহীদ নুরুল ইসলাম,

শহীদ চিকন মিয়া, শহীদ জহুর আহম্মদ, শহীদ ইদ্রিস, শহীদ সোলাইমান, শহীদ রফিকুল আলম, শহীদ বজল আহম্মদ, হিন্দুদের মধ্যে ছিল শহীদ ক্ষেমেশ চন্দ্র

ভট্টাচার্য্য, শহীদ রমেশ চন্দ্র নাথ, শহীদ কৃষ্ণ হরি নাথ, শহীদ শুধাংশু বিমল নাথ, শহীদ হরিপদ নাথ, শহীদ হরি লাল নাথ, শহীদ বিপিন চন্দ্র নাথ, শহীদ সুবেন্দ্র লাল নাথ, শহীদ হরিধন নাথ, শহীদ নগর বাঁশি নাথ ও শহীদ গৌর হরি নাথ।

 

সেদিনের নৃশংস হত্যাকন্ডের বর্ণনা দিয়ে লেলাংয়ের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবিণ সাংবাদিক মাস্টার আবুল বশর বলেন, দিনটি ছিল ঈদের দিন। প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছিল ঈদের আনন্দ উৎসব। এসময় লেলাং এর তিনদিক থেকে পাক বাহিনীরা প্রতিটি ঘরে ডুকে বেচে বেচে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। সেখানে যাচাই বাচাই করে ২৯ জনকে পুকুর পাড়ের পাশে ধানি জমির আঁইলে সারিবদ্ধ ভাবে বসিয়ে ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে। হত্যার পর কয়েকজনকে আগুনে পুড়ে ও মাঠিতে চাপা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

 

আরো জানা গেছে, ফটিকছড়ির গণ হত্যা দিবসটি কোন আনুষ্টানিকতায় স্মরণ করা

হয়না। ফটিকছড়ির শিশু-কিশোররা এই গণ হত্যা সম্পর্কে জানেনা। এজন্য ফটিকছড়ি

উপজেলা প্রশাসন, ফটিকছড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও

ফটিকছড়ির রাজনৈতিক সংগঠন গুলো একে বারেই উদাসীন।

 

 

কাঞ্চন নগরে গণ হত্যাঃ

 

পরেরদিন ফটিকছড়ির সীমান্তবর্তী দূর্গম ইউনিয়ন কাঞ্চন নগরে পাক-বাহিনী চালায় আরেক হত্যাযজ্ঞ। এই গ্রামের তৎকালীন বি.এ পাস যুবক হেঁদায়তুল ইসলাম চৌধুরী এবং অজ্ঞাত নামা এক যুবককে রক্তছড়ি খালের পাড়ে ব্রাশফায়ার করে

হত্যা করে রাজাকারেরা। সেখান থেকে এসে পাক-বাহিনীরা দঃ কাঞ্চনপুরের গোমস্তা পুকুর পাড়ে নিরীহ ৯ জন বাঙ্গালীকে এক রশিতে বেঁধে ব্রাশফায়ার

করলে ৭ জন তৎক্ষনাত মৃত্যু বরণ করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় আহমেদ হোসেন ও বদিউল আলম নামক দুই জন। এখানে নিহতরা হলো শহীদ নুরুল আলম, শহীদ ভোলা, শহীদ বানু হোসেন, শহীদ ভোলা ওরফে ভোলাইয়্যা, শহীদ জেবল হোসেন, শহীদ ইসলাম

ও শহীদ কালা মিয়া।