সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে গ্রাহকদের হয়রানি নিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে আসছে। জাতীয়, আঞ্চলিক প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত এসব খবরে ওঠে আসে ভূমি অফিসে কর্মরতদের ঘুষ-দুর্নীতি, নথি গায়েব, সেবা প্রদানে দীর্ঘ সূত্রিতা, সরকার ঘোষিত সময়সূচী না মানা ও বহিরাগত-অভ্যন্তরীণ দালাল চক্রসহ নানা বিষয়।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিস নিয়ে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন তার দপ্তরের নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। এসয়ম তিনি ক্যাপশনে ওই প্রতিবেদকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি উল্লেখ করেন "তবে এ কথা বলবো না যে, ভূমি অফিসের সবাই সাধু। বহিরাগত দালাল এবং অভ্যন্তরীণ দুষ্কৃতিকারীদের একযোগে প্রতিহত করাই আমাদের লক্ষ্য। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি..৷" তার এই পোস্ট প্রকাশের পর মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। যা রীতিমত টক অব দ্য সীতাকুণ্ডে পরিণত হয়। তার এই পোস্টে মন্তব্য করেন ভূমি অফিসে আগত ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাগণ। এদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক, বিজ্ঞ আইনজীবী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, সমাজকর্মী, প্রবাসীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার আবুল হাসনাতঃ নিজ জমি নামজারির জন্য দীর্ঘ ১ বছর ভোগান্তি পোহাইয়েছেন উল্লেখ করে এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার আবুল হাসনাত লিখেছেন সম্মানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আপনার সুনাম রয়েছে। ভূমি অফিস আপনার আওতাধীন। তাই সবকিছু অপপ্রচার আর দালালদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। আমার সামান্য একটা জমির নামজারী করতে এক বছর সময় লেগেছে। আমার ৩০ বছরের সাংবাদিকতাও ওই অফিসে খুব বেশী কাজে দেয়নি। অতীতে এমন পরিবেশ এখানে ছিলনা মনে হয়। আমার পুরো জীবনে এইবার নিজের কাজে গিয়ে এমন অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা হলো। তার এই কমেন্টসে মোট ৩৩ টি লাইক পড়ে। প্রসঙ্গত, গত ৪ আগষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলমের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির এক পোস্টে সাংবাদিক আবুল হাসনাত মন্তব্য করেছিলেন "আপনার পদোন্নতি কামনা করছি। আমার নামে সামান্য একটা নামজারি আপনার দরবারে ঝুলে আছে এক বছর ধরে। আপনার কাছে এই জন্য দুইবার গিয়েছিলামও। কোন অগ্রগতি নাই। পরের চাকুরী করি, তাই সময় হয়ে ওঠেনা ভূমি অফিসে গিয়ে ঘুরঘুর করার। সেদিন এই মন্তব্যের জবাবে এসিল্যান্ড আশরাফুল আলম লিখেছেন, "আমাকে আমার ম্যাসেঞ্জারে একটু মামলা নম্বরটা কাইন্ডলি টেক্সট করেন।"
শর্ষ্যের মধ্যে ভূতঃ
খালেদ শাহনেওয়াজ নামে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী মন্তব্য করেন আমার একটা নামজারি মামলার শুনানী দীর্ঘ দুই বছর লেগেছে। মামলার শুনানীর সময় বর্তমান এসিল্যান্ড সাহেবের সামনেই দালাল উপস্থিত হয়ে আমার প্রতিপক্ষের পক্ষে শুনানি কালে আমাদের পক্ষ থেকে দালাল কেন শুনানী করছে বলায় এসিল্যান্ড সাহেবের উত্তর ছিল প্রতিপক্ষ শুনানি করতে পারছেন না তাই। সুতরাং এসিল্যান্ড সাহেব নিজেই দালালকে প্রশ্রয় দেন। সুতরাং শর্ষ্যের মধ্যে ভূত।
দালালের সহযোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীঃ
ব্যবসায়ী দিদারুল আলম লিখেছেন, দালালদের উপর দায় চাপিয়ে, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধোয়া তুলসীপাতা বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। বস্তুতপক্ষে এসব দালাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
গিয়াস সাকিব নামে এক মানবাধিকার কর্মী লিখেছেন, সম্মানিত ইউএনও মহোদয় আমি আপনাকে ভালো করে চিনি আপনি একজন অসংখ্য ভালো মানুষ, এবং আল্লাহতাআলা আপনাকে সেই পুরস্কারটাও কিছুদিন আগে দিয়েছেন। আপনি দালালদের পাশাপাশি এসিল্যান্ডের ঘুষখোর কর্মচারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করুন। রেজাউন নুর হারুন নামে এক প্রবাসী লিখেছেন, ভুমি অফিসের মূল দালাল হচ্ছে অফিসের স্টাপরাই। বিশেষ করে সার্ভেয়ার অহিদুর রহমান ও তার পিয়ন বেশি ঘুষখোর।
ইচ্ছমতো খাজনা আদায়ঃ
রনি হাসান নামে এক সমাজকর্মী মন্তব্য করেছেন, ধন্যবাদ স্যার। সাথে খাজনার বিষয়টাও দেখবেন দয়া করে। খাজনা আসে ৭০০ টাকা নিয়ে নেয় ১৬ হাজার টাকা এর প্রতিকার কি?
ইমরান হোসেন চৌধুরীর মন্তব্য ধন্যবাদ স্যার,
এই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদের কঠোর ব্যবস্থা এবং সাথে সাথে দালাল মুক্ত করা অতিব জরুরী....
কুমিরা ভূমি অফিসে নাল জমির আট বছরের খাজানা পরিশোধ করতে গিয়েছিলাম তারা আমার থেকে চাইলো সাড়ে তিন হাজার টাকা, আমি বলছিলাম অত টাকা কেন তখন বলছে ২০০০ টাকা দেন, আমি তাহ প্রদান করি কিন্তু আমাকে খাজনা দাখিলা দিচ্ছে ১৩৫ টাকার...
দীর্ঘ ভোগান্তিতে হতাশ সেবাগ্রহীতাঃ
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির মেম্বার এমডি আনিস লিখেছেন, ধন্যবাদ স্যার, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমি আমার জীবনের সমস্ত আয় ও আমার ওয়াইফের সমস্ত গহনা বিক্রি করে ১৫.৯৫ শতক জমি কিনেছি। ঐ জমি নামজারীর জন্য দিয়েছি আজ ৬ মাস হতে চলেছে। কুমিরা তহসিল অফিস থেকে প্রস্তাবিত খতিয়ান হয়ে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে গেলে এসিল্যান্ড মহোদয়ের সাথে আমি নিজে কথা বলি, এসিল্যান্ড স্যার সার্ভেয়ারকে উক্ত জমি সরেজমিনে দেখে সার্ভে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিলে সাভের্য়ার সেই মোতাবেক দখল সঠিক পেয়ে রিপোর্টও দিয়েছেন। কিন্তু আমি যার কাছ থেকে কিনেছি তার নামের প্রকাশ- থাকায় চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। আমার জমিটি যদি নামজারী নাহয় তাহলে কখনও আমিতো এটা হস্তান্তর করতে পারব না। উল্লেখ্য যে, আমি ২,১০,০০০/- সরকারি করয়াদী দিয়ে এ জমি রেজিস্ট্রেশন করেছি। তাহলে কথা থাকে যদি উক্ত জমি প্রত্যয়নপত্র দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হতে পারে, তাহলে নামজারী হবে না কেন....?
আমি তো কোন প্রতারণা করিনি আমার অপরাধ কী....? নামজারী হবে না এটাও বলছেন না তাহলে,
এরপরও আজ ৬ মাস হতে চলছে নামজারী খতিয়ানটি এখানো পায়নি বার বার ধর্ণা ধরার পরও।
তাই এখন সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে আর যাচ্ছি না। নিজের ক্রয়কৃত জমি নিজে নামজারী করতে গিয়ে এত ভোগান্তির শিকার হবো কখনো কল্পনা করিনি....!
পূর্বে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়াঃ
নূর খানে নামে এক সমাজকর্মী পূর্বে প্রকাশিত "ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির ফাঁদ সীতাকুণ্ড ভূমি অফিস" শিরোনামে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রদর্শন করে মন্তব্য করেন, গত সপ্তাহের নিউজ, কি হলো জানার অপেক্ষায় আছি।
বোধোদয়ঃ
রহিম উদ্দিন রিমন মন্তব্য করেছেন, মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়, আপনি ভালো করে নজর দিলে, হয়তো অনেক অনিয়ম আপনার চোখে ধরা পড়বে... সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে গেলে সাধারণ মানুষ কিভাবে হয়রানির শিকার হয় তা আপনি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন.....।
সাদেকুল আমিন নামে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মন্তব্য, সাধারন মানুষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট কি পরিমাণ হেনস্তার শিকার তা আপনার পোস্টের কমেন্টগুলোর মাধ্যমে বুঝা যায়।
এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন এর দপ্তরের জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড ও উপরোক্ত পোস্টে ভূমি অফিসের বাস্তবচিত্রের সাদামাটা উপস্থাপনের জন্য অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানান এবং একইসাথে হয়রানির প্রতিকার প্রত্যাশা করেন।