নগরীর আউটার স্টেডিয়াম। একদিকে যেমন ঐতিহ্যের সাক্ষী তেমনি অপরদিকে অবহেলারও সাক্ষী। যে আউটার স্টেডিয়াম এক সময় মুখর থাকতো ক্রীড়াবিদদের পদচারণায় সেই আউটার স্টেডিয়াম গত দুই দশক ধরে যেন ক্রীড়াবিদদের জন্য নিষিদ্ধ এক জনপদ। কারণ গত দুই দশক ধরে আউটার স্টেডিয়ামে যত খেলা হয়েছে তার চাইতে বহুগুণ বেশি হয়েছে মেলা। যে আউটার স্টেডিয়ামে এক সময় স্টার সামার কিংবা স্টার যুব টুর্নামেন্টের মত বড় এবং দেশের ক্রিকেটারদের বহু কাঙ্ক্ষিত টুর্নামেন্ট হতো সে আউটার স্টেডিয়ামে গত দুই দশকে কোনও খেলাধুলার আয়োজনই হয়নি। অথচ এই আউটার স্টেডিয়ামকে রক্ষা করার জন্য কত আন্দোলন–ই– না হয়েছে।
একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে যেই কদু সেই লাউ। বরাবরই নানা মেলার দখলে চলে গেছে আউটার স্টেডিয়াম। কোনও পরিকল্পনাই দেখেনি আলোর মুখ। মেলা আয়োজনের পাশাপাশি, নানা গাড়ি, ডেকোরেশন কোম্পানির সামগ্রী রাখার নিরাপদ স্থানেও যেন পরিণত হয় আউটার স্টেডিয়াম। এরই মধ্যে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতরেই নির্মাণ করা হয়েছে পাবলিক টয়লেট। চারদিকে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা।
অনেকটাই পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়ামকে রক্ষায় এবার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গতকাল তিনি দ্বিতীয়বার পরিদর্শন করেছেন আউটার স্টেডিয়াম। কিভাবে আউটার স্টেডিয়ামকে আবার খেলার মাঠে পরিণত করা যায় সে লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনাও গ্রহণ করেছেন। প্রথমত তিনি আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণ করে তা নিশ্চিত করতে চান। আর সে কারণেই গতকাল সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সঙ্গে করে নিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে সীমানা নিশ্চিত করে সে সীমানার মধ্যে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর আউটার স্টেডিয়ামকে করা হবে রেড মার্ক। তার পরেই শুরু হবে মাঠ সংস্কারের কাজ। জেলা প্রশাসক বলেন, আমি এই নগরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ক্রীড়া সংগঠক সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। তারাও খেলার মাঠে আর মেলা হোক সেটা চান না। আমরা সবাই মিলে খেলার মাঠ খেলোয়াড়দের মাঝে ফিরিয়ে দিতে চাই। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন তিনি।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা নিশ্চিত হওয়ার পর আউটার স্টেডিয়ামের চার পাশে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে মাঠ সংস্কারের কাজ। স্টেডিয়াম শপিং কমপ্লেঙ, সুইমিং পুল সহ আউটার স্টেডিয়ামের মোট আয়তন প্রায় ৬.৯ একর। যদিও এখন খুব বেশি অবশিষ্ট নেই। শপিং কমপ্লেঙ, সুইমিং পুল, স্টেডিয়ামের পূর্বদিকের গ্যালারি দ্বিতলকরণ এবং ফ্লাড লাইটের টাওয়ার সব মিলে বেশিরভাগ অংশ চলে গেছে আউটার স্টেডিয়ামের। যে অংশটা বাকি আছে সেখানে এখন চলে বছরের বেশির ভাগ সময় মেলা। যদিও যেটুকু অবশিষ্ট আছে আউটার স্টেডিয়ামের তাতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ছোট ছোট অনেকগুলো ইভেন্ট আয়োজন করা সম্ভব। আর তাই সেদিকেই এগুতে চান জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অর্থায়নে এই মাঠ সংস্কার করা হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন জানিয়েছেন আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ সংস্কার কাজে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভারতীয় কিউরেটর প্রভীন হিঙ্গানিকারকে কাজে লাগাতে চান। এই কিউরেটর জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বাইরের বড় একটা জায়গাকে সুন্দরভাবে ক্রিকেটের উইকেটে পরিণত করেছে। যেখানে গত বিপিএলে দেশি বিদেশী ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেছেন। তাকে দিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ তৈরির কাজটি করাতে চান সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক।
আউটার স্টেডিয়াম এখন একরকম ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চার পাশের রেস্টুরেন্ট আর ভাসমান দোকানগুলো থেকে ময়লা পড়ছে সেখানে। ড্রেন দিয়ে যাচ্ছে পাবলিক টয়লেটের ময়লা। ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে চারপাশ। এখন এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করে আউটার স্টেডিয়ামকে সংস্কার করাটা বড় একটি চ্যালেঞ্জও। আর সে চ্যালেঞ্জ উৎরাতে চান জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা।