ফটিকছড়ির নাজিরহাট সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালে সিজার অপারেশনে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠা গৃহবধু মুন্নি আক্তার (৩৩) মারা গেছেন। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার ভাই ওমর ফারুক।
গত ২৪ আগষ্ট প্রসব ব্যথা ওঠায় সন্তান প্রসবের জন্য নাজিরহাটস্থ সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালে ভর্তি করানো হয় ফটিকছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড জামান বেপারীর বাড়ী মৃত ফোরকান আহমেদ স্ত্রী মুন্নি আক্তারকে (৩৩)। একই দিন রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের মা হন গৃহবধু মুন্নি আক্তার। প্রসবের দুই দিন পর ২৭ আগস্ট সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়েছে জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।।
চমেক হাসপাতালে দু'দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মুন্নি আকতারের শারীরিক অবস্থা আরোও অবনতি হলে পরিবারের লোকজন সেন্ট্রাল পার্ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর একদল বিক্ষুব্ধ জনতা সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালে হামলা চালায়। এ সময় হসপিটালের কাচ, আসবাবপত্র এবং দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হসপিটালের চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা আত্মগোপনে চলে যান। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ফটিকছড়ি থানা পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন ২৯ আগস্ট ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিমকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) পাওয়া না যাওয়ায় পরে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুন্নী আক্তার।
গৃহবধূ মুন্নি আকতারের মামা মো. হাসেম বলেন, 'সেন্ট্রালপার্ক হসপিটালে আমার ভাগ্নি মুন্নির ভুল চিকিৎসা বা ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই যাতে অন্য কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়।'
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হাসপাতালটি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি ফোন তুলেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম বলেন, 'যেহেতু এ ঘটনায় আমাকে রেখে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা তদন্তও শুরু করেছি। কিন্তু হঠাৎ আজ রোগীটি মৃত্যুবরণ করায় আমাদের তদন্তের কাজ দুয়েক দিন পিছিয়ে যেতে পারে। আশা করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনাটি উদঘাটিত হবে।'
জানা যায়, নিহত মুন্নী আক্তারের ১৩, ১০' ৫ বছর বয়সী ৩টি কন্যা সন্তান ও সিজারের মাধ্যমে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে তার বিদেশ ফেরত স্বামী হৃদরোগের আক্রান্ত হয়ে মারা যান।