আজ শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

‘রিজার্ভ কখনোই ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৮ অগাস্ট ২০২২ ১১:০০:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। এমনকি আগামী বছরজুড়ে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়নের বেশিই থাকবে। দুই বছর পর ঋণ পরিশোধ জনিত চাপে রিজার্ভ কিছুটা নামলেও ভবিষ্যতে কখনোই তা ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ তথ্য।

শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ ও করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উদ্যোগের সুফল এরইমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা আশা করছেন, উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে কখনোই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না।

দেশের আমদানি ব্যয়, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক ঋণ, ঋণের কিস্তি ও বৈদেশিক অনুদানসহ রিজার্ভের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি থাকবে। ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। গত জুলাইতে ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া, যেভাবে রফতানি আয় আসছে, সেই ধারা ঠিক থাকলে কোনও সমস্যা হবে না।

তিনি উল্লেখ করেন, রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২৩ ও ২০২৪ সালজুড়ে ৩৮ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রিজার্ভ থাকবে। এমনকি ২০২৫ ও ২০২৬ সালের দিকে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের কিছুটা চাপ থাকবে, কিন্তু তখনও রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকবে।

এদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে সামঞ্জস্য ফেরাতে চলতি অর্থবছর ২০ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বেড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বেশ খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১২ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি আগস্টেও রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে এলসি খোলা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের। এ সময়ে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স খাতে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

সেই হিসাবে জুলাইয়ে ব্যয়ের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি আগস্টেও। আগস্টের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসীরা ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিলাসবহুল পণ্যসহ ২৭ ধরনের পণ্যে শতভাগ মার্জিন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে কমেছে আমদানির এলসি। যার প্রভাব পড়ছে ডলারের বাজারে। তিনি আরও বলেন, রেমিট্যান্স বেড়েছে। রফতানি আয়ও ভালো। সব মিলিয়ে অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। এতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। বর্তমান যে সংকট, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম কমতে শুরু করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ কোনও সংকটময় পরিস্থিতিতে নেই বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) এক অনলাইন সভায় বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে আইএমএফ-এর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক ডিপার্টমেন্টের ডিভিশন চিফ রাহুল আনন্দ এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলক অল্প—জিডিপির ১৪ শতাংশের মতো।

 

এদিকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। ঋণপত্র খোলার হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিষ্পত্তির হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলারের। যা জুনের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলার কম। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। জুন থেকে জুলাইয়ে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ।

জুনে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে ১১৭ কোটি ডলার কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৫৮ কোটিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে আমদানি ব্যয় ২ বিলিয়ন ডলার কমার পর আগস্টেও এলসি খোলা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।