আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১২ অগাস্ট ২০২২ ১১:৩২:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে মোটা, সরু সব ধরনের চালের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারিতে ৩ থেকে ৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। কয়েক হাত ঘুরে এই চাল খুচরা ক্রেতারা কিনতে গিয়ে উঠছে নাভিশ্বাস।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যার কারণে এবছর হাওড়ে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যান্য এলাকায়ও প্রকৃতিক দুর্যোগে ফলন বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ কমেছে। ফলে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন কম হওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে ডলার–সংকটের কারণে আমদানিতে গতি নেই। বাড়তি দামে এখন বড় চালানে চাল আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা৷ নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এসব চাল ৫ থেকে ৬ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। আটাশ চাল প্রতিকেজি ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা।  গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। পাইজাম ৫০ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাস্কি চাল ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩ হয়েছে। মোটা স্বর্ণা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিছু কম টাকায় চাল কিনতে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থেকে বাবুবাজার আড়তে এসেছেন আজিম হোসাইন পারভেজ। তিনি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। দুদিন আগে মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) কিনেছি তিন হাজার ২৫০ টাকায়। আজ সেই চালই তিন হাজার ৪০০ টাকা চাইছে। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। এই দোকান থেকেই বেশিরভাগ সময় চাল নেই। দোকানিরা বলছেন, কাল নাকি আরও বাড়বে। কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আজ চাল কিনতে এসে চোখে পানি চলে এসেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ।  এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে আমরা কোথায় যাবো। না খেয়ে মারা যাবো। আমাদের ব্যয় বাড়লেও আয় তো বাড়েনি।  

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মিল মালিকদের বিকল্প উপায়ে ধান থেকে চাল করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে আমদানি কম হচ্ছে। যেটুকু বাজারে এসেছে, সেটাও দেশি চালের দামের প্রায় সমান।  

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের কারণে যে শুধু ভাড়া বেড়েছে তা নয়। চাল প্রক্রিয়াকরণের খরচও বেড়েছে। সেজন্য মিলগেটে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সামনে দাম আরও বাড়বে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের চাল গুটি স্বর্ণা। এই মোটা চালও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা।