আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সেন্টমার্টিন নৌরুটে যোগাযোগ বন্ধ রাখায় টেকনাফ উপজেলা বিএনপি'র বিবৃতি

টেকনাফ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১১ জুন ২০২৪ ০৯:৫৬:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গেল কয়েক মাস ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। তাদের সরকারের সেনা এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে যা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জান্তা সরকার তাদের সীমান্তে  নিরাপত্তা জোরদার করেছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীদের দমনে সব ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন মিয়ানমারের সেনা-পুলিশ। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত চুক্তি রয়েছে বহুকাল ধরে। এ চুক্তি অনুযায়ী টেকনাফ কেকে খাল, স্থল বন্দর ও দমদমিয়া ঘাট হয়ে প্রতিদিন সেন্টমার্টিনগামী নৌযানগুলো অবাধে যাতায়াত করে আসছিল। এ রুট হয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশ বাণিজ্য জাহাজগুলোও অবাধে যাতায়াত করছে বহুকাল থেকে।

 

মিয়ানমারের আভ্যন্তরিণ সংঘর্ষে এতদিন কোন ধরনের  প্রভাব-প্রতিপত্তি আমাদের সীমান্তে না পড়লেও গেল ৫ই জুন মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিদ্রোহী বাহিনীর পক্ষে আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অর্পিত থাকা হাইস্পিডকে লক্ষ করে ২৫-৩০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে।

 

এদিন ঐ হাইস্পিডে ছিলেন 'তথাকথিত উপজেলা নির্বাচন'র টেকনাফ উপজেলাধীন স্থগিত ৬০নং 'জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারসহ দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তা।

 

সে দিনের পর থেকে বহাল তবিয়তে এ সীমান্ত গুলি চলছেই।

 

গত ৬-৭ই জুন স্থানীয় কয়েকটি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রলার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, এক পর্যায়ে মিয়ানমারের নাইক্ষং ডিয়ার (দ্বীপ) অদূরে আসতেই বৃষ্টি ধারায় শুরু হয় গুলি বর্ষন। এ ট্রলারদ্বয় কোন রকম শাহপরীর দ্বীপে নোঙ্গর করে বেঁচে যায়। এরপর জীবনের নিরাপত্তা জনিত কারনে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ।

 

নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য, প্রয়োজনীয় ঔষুধের সংকট ও জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ১১ই জুন সকাল ১০ ঘটিকায় কয়েকটি ট্রলার ও কয়েকটি স্প্রিড বোট টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার পৌনে এক ঘন্টার মধ্যে ফের দ্বীপে ফিরে আসে। তাদের বনর্না মতে জানা যায় মিয়ানমার বিদ্রোহী বাহিনী ছোট ছোট নৌকা করে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রলার ও স্পীড বোটকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়ছে। এতে এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি না নিয়ে তারা দ্বীপে ফিরে আসতে বাধ্য হন।

 

এখন আপাতঃ সেন্টমার্টিনস্থ কর্মস্থলে নিয়োজিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাড়ি যাওয়ার আশা, এবং টেকনাফে ৮-১০ দিন ধরে আটকে থাকা

 

শত শত দ্বীপবাসীর আর্তনাদ বেড়েই চলছে। বিষয়গুলো টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. হাসান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মো শাহাদত হোসেনের নজরে এসেছে এবং দৃষ্টিগোছর হয়েছে। তাই আমরা উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে টেকনাফে আটকে থাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর পাশে দাঁড়ানো'র জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন রাখছি।

 

সামনে কুরবানির ঈদ। এর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে দ্বীপে খাদ্য দ্রব্যের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট শুরু হয়েছে জ্বালানী তেলের। যেহেতু এ দ্বীপে কোন ধরনের উৎপাদন হয় না, তাই সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রি সীমান্ত পার করে টেকনাফ শহর থেকে নিয়ে আসা হয়। এ ক'দিন সীমান্ত সমস্যার কারনে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সকল সমস্যা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। ৭ই জুন স্ট্রোক করা মোঃ সেলিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ নিয়ে যেতে না পারার কারনে তিনি মারা গেছেন। এ রকম পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন স্থির থাকলে দ্বীপে দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন।

 

অথচ এ ধরনের একটি চরম অমানবিক ও বিপর্যয়ের সময়েও অবৈধ, অনির্বাচিত দখলবাজ সরকার চুপ হয়ে আছে। তাদের কুটনীতি তাদের অন্দরমহলে লেপ্টে রয়েছে। জনগনের জীবনমান নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা না থাকলেও বিরোধী মত দমনে তারা ঠিকই রুটিন কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

দেশের অধিক সম্ভাবনাময় এ পর্যটন জোনের স্থানীয় জনগনের চরম এ দুঃসময়ের কোন বার্তা সরকারি মহল কানে তুলছেন না। আমরা এতে মর্মাহত।

 

অতি স্বল্প সময়ে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।

 

বিকল্প পথ সৃষ্টির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতি আমরা ধিক্কার জানানো'র পাশাপাশি সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাধারন মানুষের জীবনের কথা কর্তৃপক্ষের টেবিল  ওয়ার্কে রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।