আজ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আশ্বাস

মোঃ শহিদ, উখিয়া : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৬ অগাস্ট ২০২২ ০৩:০৯:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। মঙ্গলবার(১৬ আগস্ট) সকালে ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এ ই-ভাউচার আউটলেট,রোহিঙ্গা মহিলা গ্রুপের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে ব্যাচেলেট বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন প্রকল্পের স্থান স্বশরীরে পরিদর্শন করেন। ক্যাম্প-২০ এ আইওএম পরিচালিত সাইট ডেভেলপমেন্ট হাব এর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।এসময় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে তিনি এ আশ্বাস দেন। কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারী, যুব প্রতিনিধি ও ধর্মীয় প্রতিনিধি ইমামদের সঙ্গে আলাদাভাবে মতবিনিময় করেন। এ সময় জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারসহ মানবাধিকারের প্রতি গুরুত্ব দেবে বলে জানান তিনি।

মিশেল ব্যাচেলেট সেখান থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন লার্নিং সেন্টার পরিদর্শনে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন।,তিনি জানতে চান ক্যাম্পে তারা কেমন আছেন, প্রতি উত্তরে রোহিঙ্গারা বলেন আমরা ভালো আছি।এছাড়াও এত বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।ক্যাম্পে থাকা খাওয়া চিকিৎসা,শিক্ষা, সেবা পাচ্ছেন বলে রোহিঙ্গারা জানান।

ক্যাম্প ৪ এর রোহিঙ্গা নেতা জমির বলেন,নিজ দেশ মিয়ানমারে গিয়ে সুন্দর ভাবে নাগরিকত্ব নিয়ে তারা ফিরতে চাই,একই ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ২০১৭ সালের মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর চরম নির্যাতন করেন,তাই আবারও মিয়ানমারে ফিরে গেলে যাতে জোর জুলুম হত্যা খুন হতে না হয় এ ব্যবস্থা করতে হবে।রোহিঙ্গাদের চলাচলে যাতে বাধা না থাকে এবং ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

একই ক্যাম্পের আবু হানাত বলেন,মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যেভাবে নিপীড়ন গণহত্যা চালিয়েছে তা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এব্যাপারে জাতিসংঘের কটুর ব্যবস্থা নিতে হবে।এসময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট রোহিঙ্গাদের উপর চালানো বর্বরতা ও নির্যাতনের কথা শুনেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আরও বলেন,রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পে শরণার্থী জীবন কেমন কাটছে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান মিশেল ব্যাচেলেট। এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন রোহিঙ্গা নারী গোলবাহার ও আমেনা খাতুন। তারা বলেন, ‘মিশেল ব্যাচেলেট আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা ৮-১০ জন নারী ছিলাম। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রত্যাবাসন হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

এছাড়া মওলানা নুর মোহাম্মদ, হাফেজ ইউনুস ও মওলানা আজিম উল্লাহসহ ১০ জন ইমামের সঙ্গে কথা বলেছেন মিশেল ব্যাচেলেট। 

ওই রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। পরিবেশ সৃষ্টি হলে, নাগরিক অধিকার হারানো ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিলে এবং গণহত্যার বিচার করা হলে তারা অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যাবে। 

সোমবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারে আসেন মিশেল ব্যাচেলেট। আজ সকাল ৯টায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলসহ উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছান। এরপর কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পে এসে শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরে ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, আইওএম-এর চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। 

দুপুরে কক্সবাজার শহরে ফিরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতসহ সরকারের শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। তবে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। 

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে আরআরআরসি’র কর্মকর্তা, ক্যাম্প ইনচার্জ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত চারদিনের সফরে রবিবার ঢাকায় এসে পৌঁছান ব্যাচেলেট, সেদিন রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। সোমবার জাতীয় শোক দিবসে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ব্যাচেলেট। মঙ্গলবার কক্সবাজার সফর শেষে পরদিন বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাঁর দেখা করার কথা রয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার জুলুম নিপীড়ন গণহত্যার কারণে প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।