আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বান্দরবান এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উপজাতীয় লাইসেন্সে কাজ পাইয়ে দিয়ে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৬:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় ফাঁকি দিতে উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড সম্পাদনে কতিপয় ঠিকাদার ব্যবহার করছে উপজাতীয় লাইসেন্স। এই অপকর্মে জড়িত খোদ সংশ্লিষ্ট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী। যার ফলে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিষয়ে দৈনিক সাঙ্গুর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দৈনিক সাঙ্গুর ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে প্রথম পর্ব। 

জানা যায়,বান্দরবান জেলায় যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প। দীর্ঘ বছর ধরে এসব প্রকল্প এলজিইডির সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান গুলো টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে আসছে। 

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানা যায়,পার্বত্য রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলজিইডি'র তালিকা ভুক্ত উপজাতী বাঙ্গালী মিলে প্রায় দুইশত পঞ্চাশটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের লাইসেন্স রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় ঠিকাদারী কাজে বাঙ্গালীদের জন্য ৫% আয়কর (ইনকাম টেক্স) প্রযোজ্য থাকলেও উপজাতীদের জন্য তা মওকুফ করা হয়েছে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছর ধরে বান্দরবানের কথিপয় অসাধু বাঙ্গালী ঠিকাদার সরকারের ৫% রাজস্ব ফাঁকি দিতে উপজাতী লাইসেন্স ব্যবহার করে ৫-১০% দর কম দিয়ে 

 কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। বান্দরবান এলজিইডিতে তালিকা ভুক্ত উপজাতীসহ বাঙ্গালী ঠিকাদারী লাইসেন্স রয়েছে প্রায় শতাধিক। তৎমধ্যে ২০টি রয়েছে উপজাতী লাইসেন্স বাকী আশিটি বাঙ্গালীর। গত ১৫ বছরে বান্দরবান এলজিইডিতে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ১০% কাজ সম্পাদন করা হয় বাঙ্গালী লাইসেন্স দিয়ে বাকী ৯০% কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে উপজাতীয় লাইসেন্স দিয়ে। বান্দরবানে বহুল আলোচিত সমালোচিত সেই উপজাতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের লাইসেন্স গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে - মি.মায়াধন কন্সষ্ট্রাশন,এমএম ট্রেডার্স,মেসার্স মিল্টন ত্রিপুরা,মি.ইউটিমং,মেসার্স মার্মা এন্টারপ্রাইজ,মেসার্স অনন্ত বিকাশ,গ্লোবাল ট্রেডার্স,মেসার্স ইমু কন্সষ্ট্রাকশন। এর মধ্যে কয়েটি লাইসেন্স বান্দরবানের বাকী গুলো রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির। উপজাতীয় এসব লাইসেন্স ঘুরে ফিরে স্থানীয় আনিছুল হক সুজন ও তার ছোট ভাই মেহেদীি হাসান,মো: জসিম উদ্দীন(প্রকাশ ভাগানি জসিম),সাইদুর রহমান জুয়েল,মো:জাফর উল্ল্যাহ, মো: মুজিবুর রহমান,কামাল হোসেন(প্রকাশ লেস কামাল))

,ফারুক চৌধুরী,ইমতিয়াজ হোসেন,মোজাফ্ফর সহ আরো বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ব্যবহার করে আসছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রুমা উপজেলায় দুটি কাজের বিপরীতে টেন্ডার আহবান করা হয়। গত ৩০/৯/২০২৪ ইং তারিখ দরপত্র জমা দানের শেষ তারিখ ছিল। প্রকল্প দুটির মধ্যে রয়েছে-   ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রুমা পাইন্দু সড়কে কার্পেটিং এবং ২ কোটি ৭২ লাখ ব্যয়ে রুমা বগামুখ পাড়ায় রাস্তা কার্পেটিং। গত ১/১০/২০২৪ ইং নির্দিষ্ট তারিখ উক্ত দরপত্র খুলে দেখা যায়,  আনিচুর রহমান সুজন নামে জৈনক ঠিকাদার কাজ দুটি উপজাতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মেসার্স মায়াধন এর লাইসেন্সে ১০% নিম্নদর দিয়ে হাতিয়ে নেয়। এঘটনা সাধারন ঠিকাদারদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করে সচেতন ঠিকাদাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান,কথিপয় অসাধু বাঙ্গালী ঠিকাদার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজশে ৫% আয়কর ফাঁকি দিতে উপজাতীয় নামের লাইসেন্সে  টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ হাতিয়ে নেয়। টেন্ডার ড্রপিং  এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদারকে দরপত্রের গোপন দর(রেট) জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেয়ার মিশন শতভাগ নিশ্চিত করে। এর বিনীময়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী ১০% ঘুষ পেয়ে থাকেন। যার ফলে দীর্ঘ বছর ধরে বাঙ্গালী লাইসেন্স কোন প্রবীন ও অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা কাজ পাচ্ছেনা। তারা আরো জানান,এসব দুর্নীতিবাজ ঠিকাদর সিন্ডিকেটের কারনে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা আরো জানান,এক শ্রেনীর উপজাতীয় লোক তাদের লাইসেন্স বাঙ্গালীদের কাছে ৪% লাভে ভাড়া দিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছে আর এতে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে সরকার।

এব্যপারে বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো:জিয়াউল ইসলাম মজুমদার ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া এবং দরপত্রের গোপন দর ফাঁস করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,প্রত্যেক ঠিকাদার কাজের ষ্টিমিট হিসাব করে দরপত্র পুরন পুর্বক টেন্ডারে অংশ নেয়।