ফটিকছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুল শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ঘাতক চাঁদের গাড়ী(জিপ) চালক মোঃ আলাউদ্দিনকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। ১৩ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) রাত ১২ টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়জিদ থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ফটিকছড়ি থানার ওসি রবিউল ইসলাম। আটককৃত আলাউদ্দিন নারায়নহাট ইউপির উত্তর শৈলকুপা এলাকার রুহুল আমিন প্রকাশ তনু ফকিরের পুত্র। নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে বার্ষিক চার হাজার টাকার টোকেন সংগ্রহের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্সবিহীন চাঁদের গাড়িটি (জীপ) চালিয়ে আসছেন বলে আটককৃত আসামী আলাউদ্দিন ফটিকছড়ি থানায় পুলিশের প্রেসবিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট এর তাড়া খেয়ে মোটরসাইকেল কে বাঁচাতে গিয়ে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় বলে স্বীকার করে সে। পরে সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্নগোপনে চলে যায়।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানা ওসি রবিউল ইসলাম জানান, নিহত নিশু আক্তারের চাচা মোঃ আইয়ুব আলীর করা মামলায় আসামী আলাউদ্দিনকে ধরতে আমরা অভিযান অব্যাহত রাখি। গতকাল (রবিবার) রাত ১২ টায় সিএমপির বায়জিদ থানা এলাকা হতে আসামীকে আটক করতে সক্ষম হই।
গত ৯ ফেব্রুয়ারী(বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২ টায় এসাইনমেন্ট জমা দিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে
পেলাগাজি দীঘি সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিশা মনি(১৫) ও মিশু আকতার(১৫) নিহত হয়। তারা পাইন্দংস্থ মোল্লার বাড়ীর আবুল বশরের কন্যা মিশু আকতার ও একই এলাকার তুফান আলীর বাড়ীর লোকমানের কন্যা নিশা মনি। স্থানীয়রা গাড়ীর নিচ থেকে তাদের উদ্ধার করে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। পুলিশের টিআই নিখিল চাকমা ও সার্জেন্ট আলামিন তাদের মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর অপর একটি আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ঐ দিন দুপুরে প্রায় দুই ঘন্টা চট্টগ্রাম- খাগড়াছড়ি মহাসড়ক, ফটিকছড়ি- হেঁয়াকো সড়ক, পেলাগাজি- বারৈয়ারঢালা সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। পরে এডিশনাল এসপি শাহাদাত হোসাইন, ফটিকছড়ি নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মহিনুল হাসান, ফটিকছড়ি থানার ওসি রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার দুই দিন পরে ট্রাফিক পুলিশের টিআই নিখিল চাকমা বরখাস্ত ও সার্জেন্ট আল আমিনকে ক্লোজড করা হয় বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম জেলা পুুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক।
এঘটনার পরের দিন ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্ররা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মহিনুল হাসানকে ফটিকছড়িতে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০টি দাবী সংবলিত স্মারক লিপি প্রদান করে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দুই পরিবারের মাঝে ৪লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। পরে নিশু আকতার ও নিশা মনির মা বাবাকে দেখতে ফটিকছড়ির মহিলা এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উত্তর জেলা আওয়ামিলীগের সহসভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন আল হাসানী মাইজভান্ডারিসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে স্কুল প্রশাসন ও ছাত্র ছাত্রীরা তাদের পরিবারে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, নিহত নিশা ও মিশুর নামে পেলাগাজির দিঘীতে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিলেও ফটিকছড়ি নির্বাচিত সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এমপি আগামী বৃহস্পতিবার এসে তাদের দাবীর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন ও নিহতের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে মানববন্ধনটি স্থগিত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম গোলাম নুর।