বাংলাদেশের ইতিহাসে হজের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে এবছর। সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজে প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো খরচ ধরা হলেও কোরবানি ও খাবার বাবদ ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ হবে একজন হজযাত্রীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজের এমন খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অস্বাভাবিক বিমান ভাড়া। তারা বলছেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র অতিরিক্ত লাভের আশায় ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
২০২৩ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হজের বিমানভাড়া বাড়িয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই ভাড়া ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা, ২০১৮ সালে ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার, ২০২০ সালে ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ২০২২ সালে ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা (২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যায়নি)। সবশেষ ২০২৩ সালের জন্য হজযাত্রীর ফ্লাইট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবারের প্রতি ফ্লাইটে ৫৮ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন >> ফের বাড়ল হজ নিবন্ধনের সময়
অনেকে এবার হজে যাওয়ার জন্য আগে ভাগেই রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা। তারা ভেবেছিলেন চার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় হজে যেতে পারবেন। কিন্তু তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচে হজে যেতে হচ্ছে। খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া
হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম
অথচ স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের বিমানভাড়া ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা।
হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেকে এবার হজে যাওয়ার জন্য আগে ভাগেই রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন খরচ মাত্র ৩০ হাজার টাকা। তারা ভেবেছিলেন চার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় হজে যেতে পারবেন। কিন্তু তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচে হজে যেতে হচ্ছে। খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ভাড়া যৌক্তিক করার দাবি জানাই।
ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার করা অবশ্যই অযৌক্তিক। কোনো এয়ারলাইন্স ওয়ানওয়ে যাত্রী বহন করে দ্বিগুণ ভাড়া নেবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এয়ারলাইন্সের ফেয়ার ক্যালকুলেশন (ভাড়া নির্ধারণ) কখনো এমন হয় না
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম
এদিকে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজেদের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানোর জন্য প্রতিবছর হজযাত্রার বিমান ভাড়া অতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি করে। তারা বরাবরই বলে যে হজযাত্রীদের সৌদি পৌঁছানোর পর ফাঁকা ফ্লাইট নিয়ে দেশে আসে। তাই তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে।
আরো পড়ুন >> সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। ফাঁকা ফ্লাইট এলেই যে ভাড়া দ্বিগুণ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কারণ ফ্লাইট ফাঁকা এলে পরিচালনার খরচ অনেক কমে যায়, ট্যাক্সও লাগে না। তাই এধরনের ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার করা অবশ্যই অযৌক্তিক। কোনো এয়ারলাইন্স ওয়ানওয়ে যাত্রী বহন করে দ্বিগুণ ভাড়া নেবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এয়ারলাইন্সের ফেয়ার ক্যালকুলেশন (ভাড়া নির্ধারণ) কখনো এমন হয় না। বিমান যদি এটা না পারে তাহলে অন্য কোনো এয়ারলাইন্সকে এই দায়িত্ব দিলেই পারে। বিমানের এই সুযোগে সৌদি এয়ারলাইন্সও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। বিমান ইচ্ছে করলে অনেকভাবেই পুষিয়ে নিতে পারে। বিমান বার বার এক কথা বলে যে ফ্লাইট খালি আসে তাই ভাড়া বেশি। তবে এটা কোনো কথা হতে পারে না। একটা ফ্লাইট যখন ফাঁকা আসে তখন সেটিতে যাত্রী বা লাগেজের লোড থাকে না। যে কারণে তেল কম খরচ হয়। ভাড়া কম লাগে। এছাড়া ট্যাক্সও লাগে না। তারপরেও বিমান দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে।
বিমান বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করে কাজ করছে, নিজেদের লাভ চিন্তা করছে। শুধুমাত্র বিমানকে সুবিধা দেওয়ার জন্য লাখ লাখ টাকার বোঝ হাজিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। হজ ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি আবারো রিভিউ করা উচিত বলে মনে করেন কাজী ওয়াহিদুল।
ভারত-পাকিস্তানে হজের খরচ কত?
পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেনি। তবে দেশবাসীর জন্য খরচের ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। দেশটির দৈনিক পাকিস্তান টুডে বলছে, মিনিস্ট্রি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছে, মার্চ মাসের শুরুর দিকে তাদের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। তবে বিশ্বমন্দার কারণে এবার তারা হজ কার্যক্রমে কোনো ধরনের ভর্তুকি দিতে পারবে না। এবারের আনুমানিক হজ প্যাকেজ হবে প্রায় ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপির মতো। খরচ বাড়ানোর পরেও বাংলাদেশি টাকায় তাদের হজের খরচ প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার।
বর্তমানে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স মনোপলি মার্কেট সৃষ্টি করে ভাড়া নির্ধারণ করছে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যায় প্রায় ১৫টি এয়ারলাইন্স। সব এয়ারলাইন্সের জন্য যদি হজযাত্রী বহন উন্মুক্ত করা হতো তাহলে ভাড়াটা অনেক কমে আসতো
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোরশেদ
ভারতীয় হজ কমিটির ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, হজ কমিটি ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ ভারতীয় রুপি খরচে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই খরচেই হজযাত্রী বহন করে তারা। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা নতুন কোনো হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেনি। তবে দেশটির মিনিস্ট্রি অব মায়নোরিটি অ্যাফেয়ার্স এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এবছর একজন হজযাত্রীদের জন্য আরও ১ লাখ রুপি ভর্তুকি দেওয়া হবে। সে হিসেবে ভারতীয়রা এবার ৩ লাখ রুপির মধ্যে হজ করবেন। বাংলাদেশি টাকায় এই খরচ সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা।
হজ নিয়ে খেলছে বিমান-সৌদি এয়ারলাইন্স
বাংলাদেশ থেকে একমাত্র হজযাত্রী বহনের অনুমতি পায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া)। প্রতিবছর যাত্রীরা এ দুই এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া, যাচ্ছেতাই সেবা, শিডিউল বিপর্যয় ও অপেশাদার আচরণসহ বিভিন্ন ভোগান্তির অভিযোগ করেন। এরপরও বার বার এয়ারলাইন্স দুটিকেই দেওয়া হচ্ছে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি।
অথচ ২০১১ সালের পরিস্থিতি এমন ছিল না। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ছাড়াও ইয়েমেনের ইয়েমেনিয়া (ইয়েমেন এয়ারওয়েজ), কাতারের কাতার এয়ারওয়েজ, বাহরাইনের গালফ এয়ার, সৌদি আরবের ফ্লাইনাস, কুয়েতের কুয়েত এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) বাংলাদেশের হজযাত্রী বহন করতো। তখন এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে কম ভাড়া নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুবিধা দিয়ে ইচ্ছেমতো এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে যাত্রীদের হজ প্যাকেজ অফার করতো। তবে ২০১২ সালে হজের আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়া তৃতীয় কোনো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশি হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। এরপর থেকে এই দুই এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরাও হজে যেতে পারবেন। গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিত্র এমন নয়। ভারতে প্রতিবছর সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইস জেট, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও ইন্ডিগো এয়ার হজযাত্রী বহন করে। পাকিস্তানে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও শাহীন এয়ারলাইন্স যাত্রী বহন করে। ইন্দোনেশিয়া থেকে লায়ন এয়ার, গারুদা ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি এয়ারলাইন্স যাত্রী বহন করে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সরকার ভাড়াও নির্ধারণ করে দেয় না। এয়ারলাইন্সগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করে। তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজটি বেছে নেয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।
আরো পড়ুন >> বাবাকে কাঁধে নিয়ে ছেলের তাওয়াফ, মুগ্ধ করেছে যে দৃশ্য
আটাবের সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোরশেদ (মাহবুব) ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স মনোপলি মার্কেট সৃষ্টি করে ভাড়া নির্ধারণ করছে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যায় প্রায় ১৫টি এয়ারলাইন্স। সব এয়ারলাইন্সের জন্য যদি হজযাত্রী বহন উন্মুক্ত করা হতো তাহলে ভাড়াটা অনেক কমে আসতো। সরকারের উচিত সব ক্যারিয়ারকে হজযাত্রী বহনের অনুমতি দেওয়া, এতে ফ্লাইট ভাড়া এবং হজের খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
মানসিক ও আর্থিক চাপে হজযাত্রীরা, কমেছে আগ্রহ
গতবছরের তুলনায় এবছর হজযাত্রীদের ফ্লাইট ভাড়া বেড়েছে ৫৮ হাজার টাকা, সবমিলিয়ে হজের খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ। এভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় মানসিক ও আর্থিক চাপে পড়েছেন হজযাত্রীরা। সম্প্রতি বিষয়টি অবগত করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে আটাব। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে হজ যাত্রীদের নির্ধারিত উড়োজাহাজ ভাড়া ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৩ সালে নির্ধারিত ভাড়া আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, বর্তমানে সৌদি রিয়ালের মূল্য হিসাব করে সৌদি আরবের খরচ নির্ধারণ করা হলেও হজের সময় রিয়ালের মূল্য টাকার বিনিময় মূল্যের হার বৃদ্ধি পাবে বলে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া সারাবিশ্বে আর্থিক মন্দার কারণে যে ডলার সংকট বিরাজ করছে তার প্রস্তাব হয় যাত্রীদের আর্থিক চাপ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীরা হজ করতে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে। বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারিত করা হলে হজ যাত্রীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ অনেকটাই হ্রাস পাবে।
এদিকে অতিরিক্ত খরচের কারণে এরইমধ্যে আগ্রহ কমেছে হজযাত্রীদের। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেম থেকে জানা গেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২৬ হাজার ১৩৪ জন হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯০ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ হাজার ৯৪৪ জন।
বিমানের মুখবন্ধ
কেন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিইও এবং এমডি শফিউল আজিমকে ৮ বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সেটির কোনো উত্তর দেননি। কথা বলতে রাজি হননি বিমানের কোনো কর্মকর্তা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরাও হজে যেতে পারবেন। গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ পালন করতে পারেননি। ২০২১ সালেও বিদেশিদের জন্য হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
করোনা মহামারি কমে এলে ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার মুসলমান হজ পালন করেন। করোনা মহামারির কারণে গত বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল।