জাতীয় গ্রিডের সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে সংযুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও স্টেক হোল্ডাররা। এসময় বর্ধিত গ্যাসের দাম কমানো ও জামানত স্থগিতের দাবিও জানানো হয়। গতকাল বুধবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে বিরাজমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতে নির্বিঘ্নে সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)’র উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী ও স্টেক হোল্ডারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান।
সভায় বলা হয়, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রামে অবস্থিত। দেশেই প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে টানেল। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে বৃহৎ বৃহৎ শিল্পাঞ্চল ও কারখানা। এছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। এতকিছুর মধ্যে চট্টগ্রামকে পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর করে ফেলা হয়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামের পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, দুর্যোগ যেকোনো সময় হতে পারে। যদি আবারো কোনো দুর্যোগ হয়, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি কী হবে- ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে গত প্রায় তিনদিনে এমন একটি চিত্র দেখিয়ে দিয়ে গেছে। তাই জাতীয় গ্রিডের সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে বর্ধিত গ্যাসের দাম কমানো ও জামানত স্থগিত করারও দাবি জানানো হয়।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ায় গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রামের বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ও বেশিরভাগ শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত সোমবার (১৫ মে) সকালে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে সীমিত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও শিল্প-কারখানায় তেমন উন্নতি হয়নি।
বিজিএমইএ জানায়, শনিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই কয়েকদিনে এসব কারখানার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বিজিএমইএ প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদান উল্লেখ্যযোগ্য। শুধুমাত্র আমদানি নির্ভর গ্যাসের সরবরাহের মাধ্যমে চট্টগ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। ঘটনা-দুর্ঘটনা যেকোনো সময় হতে পারে। তাই বলে দিনের পর দিন গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে তা কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। শিল্পবান্ধব প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেন। তাই চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে জাতীয় গ্রিডের সাথে চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করতে হবে।
একইভাবে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুধবারের মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী স্টেক হোল্ডারা জাতীয় গ্রিডের সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে সংযুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে। এসময় তারা বর্ধিত গ্যাসের দাম কমানো ও জামানত স্থগিতের দাবিও জানান।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হিসেব করে দেখেছে, দুইদিনের সংকটকে পুঁজি করে চুলা, কেরোসিন, গ্যাস সিলিন্ডার, রাইস কুকার ব্যবসায়ী আর গণপরিবহনের চালক-মালিকরা চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে গ্যাস নির্ভর কারখানার মধ্যে বেশি রয়েছে ইস্পাত ও কাচ শিল্প। রড উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি লাগে গ্যাস। আর রডের কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনে বেশি লাগে বিদ্যুৎ। এছাড়া গ্যাস নির্ভর আরেকটি শিল্প হলো কাচ। কাচশিল্পে চুল্লিতে ১ হাজার ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঁচামাল গলিয়ে উৎপাদন করা হয়। এতে এ শিল্পে অপরিহার্য উপাদান হলো গ্যাস। কোনো কারণে গ্যাসের সংকটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে চুল্লি ধ্বংস হয়ে যায়।
এ সময় মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, চিটাগাং চেম্বার, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, স্টিল সেক্টর ও ক্যাবের প্রতিনিধিরা সহ কেজিডিসিএল’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।