১০ বছরের শিশু নাজিয়া। তিনদিন ধরে একটানা জ্বরে ভোগার পর সোমবার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে তার। হাড়ের জোড়ায়, গাঁটে ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের শয্যায় কাতরাচ্ছে নাজিয়া। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত একমাসে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে রোববার পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আক্রান্তের মধ্যে ৯৭১ জন পুরুষ, ৪৭২ জন নারী এবং ৩১৭ জন শিশু রয়েছে।
এছাড়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, এর মধ্যে ১০ জনই নারী। এছাড়া ৪ জন পুরুষ ও ২ শিশু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘চলতি বছর শিশুরা বেশি সংখ্যায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এখনই অভিভাবকদের সাবধান হওয়া জরুরি।’
তিনি জানান, ডেঙ্গু রোগের মূল লক্ষণ জ্বর। প্রথম দুই থেকে তিন দিন এই জ্বর থাকে এবং তা ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে গা-ব্যথা, চোখের পেছন দিকে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, পেটব্যথা, বমি ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক শিশুর গায়ে দানা বা র্যাশ দেখা দেয়। নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
ডেঙ্গুর তিন থেকে আট দিনের সময়কে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল ফেজ’। এই সময় মূলত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুর অবস্থা জটিল হয়। এ ক্ষেত্রে পেটে পানি এসে পেট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি বা মলের সঙ্গে রক্ত, খিঁচুনি, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এসব লক্ষণ হলো ডেঙ্গুর বিপদচিহ্ন। এগুলো দেখা দিলে সাবধান হতে হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বর্তমানে এই মৌসুমে জ্বর হলেই প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বরের প্রথম দিনে এ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। জ্বর হলে বাচ্চাকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি পান করাতে হবে, যেন অন্তত ৬ বার করে প্রস্রাব করে। জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ দেওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিপদচিহ্নগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিপদচিহ্ন দেখলে শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।’