আজ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগের আহ্বান ভাষাসৈনিক মতিনের স্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩০ নভেম্বর ২০২১ ১১:৫৭:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা মতিন) স্ত্রী গুলবেদুননেছা মনিকা। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে গুলবেদুননেছা মনিকা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দেশের উন্নতির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেও সরকারকে প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।

ভাষা মতিন আজীবন মজলুমের পক্ষে লড়াই করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা মতিনের পরিবারের পক্ষ থেকে আমি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

গুলবেদুননেছা আরও বলেন, দেশের সিভিল সোসাইটি এবং বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু সরকার রহস্যজনকভাবে আবেদন নাকচ করে দিয়ে অমানবিক আচরণ করছে।

লিভার সিরােসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন (বিএমএ)। সংগঠনটি বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই এ রোগের বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম।

সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এমন অভিমত জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন। বিবৃতিতে বিএমএর বর্তমান ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দেশের প্রথিতযশা ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষর রয়েছে।

এতে বলা হয়, বর্তমানে লিভার সিরােসিসসহ বিভিন্ন জটিল রােগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম তা করােনার সময়ে দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে, কেননা এ সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব জটিল রােগে আক্রান্ত রােগীরা দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন সেখানে তিনি বা তার মেডিকেল বাের্ডের চিকিৎসকরা যদি প্রয়ােজন মনে করেন তাহলে বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এনে পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ওনাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, যা ওই হাসপাতালের চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসকরা প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং রাজনৈতিক বিবেচনায় না নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশেই তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশনের সভাপতি ডা. মােস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, বিএমএর সাবেক মহাসচিব ডা. মাে. শফিকুর রহমান, আরেক সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কাজী শহিদুল আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাে. শারফুদ্দিন আহমেদ।

এর আগে গত রোববার (২৮ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে খালেদার জামিন প্রদান ও বিদেশে সর্বাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক নেতৃবৃন্দ।

বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম আজিজুল হক এবং সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেনসহ সংগঠনটির সাবেক নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার দিকে বিশেষ জোর দেওয়ার দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে কারাবন্দি। বিভিন্ন জটিল রোগে নিদারুণ অসুস্থ হয়ে আজ তিনি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বর্তমানে তার লিভার, কিডনি অত্যন্ত মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, চক্ষু রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। এরূপ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও তার চিকিৎসা বার বার ব্যাহত হয়েছে।

আরও বলা হয়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ২ বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন। সেই সাথে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। তথাপি এক ফরমায়েশি রায়ে তাকে কারাবন্দি রেখে তার চিকিৎসায় করা হয়েছে চরম অবহেলা। যার ফলশ্রুতিতে তার শারীরিক অবস্থা আজ অত্যন্ত সংকটাপন্ন।