পৃথিবীর বুকে আকস্মিক ভাবে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা মানুষের হৃদয়কে খুবই নাড়া দেয়। যা চোখে না দেখলে কখনও কারো বিশ্বাসও হবে না। সত্যিই বিধাতার কি নিয়তি! কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি পরিবারের মাঝে এমন এক হৃদয়স্পর্শী ও করুণ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বলেছিলাম উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বহদ্দারকাটা এলাকায় আনোয়ার হোসেনের নিজ বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে শাহাদাত হোছাইন (৪৮) তার ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম (১৯) ও তাদের বৃদ্ধ বাবা আনোয়ার হোছাইন (৭০) মৃত্যুর পরিবারের কথা।
বুধবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বহদ্দারকাটা এলাকায় আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন একই এলাকার মৃত মনিরুজ্জামান ছেলে আনোয়ার হোছাইন (৭০) তার বড় ছেল শাহাদাত হোছাইন ও ছোট ছেলে শহিদুল ইসলাম।
এদিকে পরিবারের দুই সন্তান ও স্বামী হারানো স্ত্রীর মনে জমে আছে শোকের মেঘ। তার মুখদিয়ে কথা বেরোনোর আগেই বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মূর্চা যাচ্ছেন স্বামী-সন্তান হারিয়ে।পরিবারের সদস্যদের সামনে মুহূর্তেই একটি ঘটনায় অকালে তরতজা তিনটি প্রাণ ঝরে যাওয়া মুখ ভেসে ওঠে ভাই-বোন ও স্ত্রীর চোখের সামনে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানাগেছে, রাতে এশার নামাজের পরে বাড়িতে ফিরেন বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেন। ওইদিন রাত ১০ টার দিকে তার নিজ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামে পরিবারের ছোট ছেলে শহিদুল ইসলাম। সে সেপটিক ট্যাংকের ডাকনা খুলে ভেতরে গেলে উঠতে পারেনি। এসময় তার বড় ভাই শাহাদাত হোছাইন ছোট ভাই শহিদুল ইসলামকে দেখতে গিয়ে তিনিও ট্যাংকের ভেতরে উঁকি দিলে সেও ভেতরে ডুকে পড়েন। ওই সময় দুই ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তাদের বৃদ্ধ বাবা আনোয়ার হোসেনও ট্যাংকে উঁকি দেয়ার সাথে সাথে সেও ভেতরে পড়ে যায। এতে তারা চিৎকার করলেও বাড়ির কোন লোকজন তাদের আওয়াজ শুনতে পাইনি। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আসতে বিলম্ব হওয়ায় দেখতে গেলে তাদের করুণ অবস্থা দেখে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় সেপটিক ট্যাংক থেকে পিতা-পুত্র তিনজনকে দ্রুত উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দুু'জনকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শাহাদাত হোছাইন ও শহিদুল ইসলামকে মৃত ঘোষনা করেন। তাদের বৃদ্ধ বাবা আনোয়ার হোসেন (৭০) অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রাত আড়াইটার দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ আনোয়ার হোছাইন মূত্যু ঘটে। বিএমচর ইউনিয়নের ইতিহাসে বহদ্দারকাটা এলাকায় একই সাথে একই পরিবারের তিনজনের হৃদয়বিদারক এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে মাতামুহুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মিজানুর রহমান নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার করতে যাওয়া স্থানীয় যুবক মানিক ও এনাম বলেন, বৃদ্ধ আনোয়ার হোছাইন চাচা'র বাড়ির সদস্যদের কান্নাকাটি ও শোরচিৎকার শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পাই তিনজন লোক সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ভাসছে। এসময় আমরা তাদের ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। তাদের শরীর এতো পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল এবং গ্যাসের গন্ধে কোন রখম ধরে ওপরে তুলতে পারছিলাম না। পরে একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে ধরে ট্যাংক থেকে ওপরে উঠালাম। উদ্ধারের পরপরই দ্রুত তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দুই ভাই শাহাদাত ও শহিদুলকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। তাদের বাবা আনোয়ার হোছাইন অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে রাত আডাইটার দিকে তিনিও মারা যান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এম এম রকিব উর রেজা। এসময় থানার বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনগত প্রক্রিয়ায় বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।