প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে পর্যটন খাতকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চলছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ সীমিত না করে জীব বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে ‘পর্যটন নীতিমালা’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিক সংগঠন সী-ক্রুজ অপারেটরস অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব)।
সেই সঙ্গে সুষ্টু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দাবি তাদের। তারা বলছে, পরিবেশের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পকেও বাঁচাতে হবে। কোনটাকে অবহেলার সুযোগ নেই। কক্সবাজারের পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। সরকারকে ভুল ম্যাসেজ দিয়ে এই শিল্প ধ্বংস করতে চায় একটি চক্র।
বুধবার (২২ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের স্টক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলেই ইনবাইন্ড ও ডমেস্টিক ট্যুরিজমের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইনবাউন্ড ও ডমেস্টিক ট্যুরিজমে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও এর অভ্যন্তরীণ এলাকা সবচেয়ে আকর্ষনীয় ভ্রমণ স্থান।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে পর্যটন। তাই সেন্টমার্টিন তথা দেশের পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের উক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জোর দাবি কক্সবাজারবাসীর।
পর্যটনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘হটকারি’ মন্তব্য করে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক আগমন সীমিত ও নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন গমনের একটি হটকারি সিদ্ধান্ত নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। দ্বীপটি বাংলাদেশের মানুষের নিকট সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র ও সমুদ্র ভ্রমণের একমাত্র মাধ্যম। এমতাবস্থায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ সীমিত না করে বরং জীব-বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে এর জীব বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করে। এতে বিভিন্ন খাত হতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়। তাছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় ১০ হাজার বাসিন্দাসহ জীবিকার তাগিদে আসা দেশের বিভিন্ন এলাকার আরও ৪ হাজার মানুষ দ্বীপটিতে বসবাস করছেন। এ দ্বীপের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস হলো পর্যটন খাত। দ্বীপের মানুষজন পর্যটকদের উপর নির্ভর করে আয় রোজগারের মাধ্যমে সংসার চালান।
সম্প্রতি দ্বীপটিতে অতিরিক্ত পর্যটক গমন পরিবেশের জন্য হুমকি বিবেচনা করে সেখানে পর্যটন সীমিত করণের সরকারী উদ্যোগে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একধরনের আতংক বিরাজ করছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই স্থানে যাতায়াত সীমিত করণের উদ্যোগটি অন্তত এই করোনা মহামারির পর আরেক বড় বিপর্যয়কর ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। এই মুহূর্তে অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ আশাতীত সীমিত করা বাংলাদেশের পর্যটনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং দ্বীপে বসবাসরত মানুষরা মানবেতর জীবনযাপন করবে।
দ্বীপের পর্যটনকে ঘিরে ‘বেকওয়ার্ড লিঙ্কেজ’ হিসেবে টেকনাফ, কক্সবাজারসহ দেশের প্রায় ৫ লক্ষ লোকের জীবন জীবিকার নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ট্যুর প্ল্যানে অন্যতম আকর্ষণ সেন্টমার্টিন। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের একমাত্র উপার্জনের উৎস এই পর্যটন খাত। একে ঘিরে তৈরী হয়েছে পর্যটকবাহী নৌযান, হোটেল-মোটেল সেবা এবং সেই সাথে বিপুল সংখ্যক তরুণদের কর্মসংস্থান হয়েছে ট্যুর গাইড সেবায়।
কক্সবাজারের স্থানীয় তরুণরা বেকারত্বের গ্লানি মুছে নিজ উদ্যোগে পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা রকম সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত আছে। এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প বিকাশে স্থানীয় তরুণরা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পরিবহন ও লঞ্চ সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। পর্যটকরা কক্সবাজার এসে সবসময় উৎফুল্লতার সাথে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে ফিরে।
সেন্টমার্টিনে পর্যটন সীমিত করার অপচেষ্টার বিষয়টি একটি দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ মনে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা স্বল্প খরচে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ভ্রমণ করে যেতে পারে। কিন্তু পর্যটক সীমিত ও নিবন্ধন করার বিষয়টি যদি কোনভাবে বাস্তবায়িত হয় তা হলে দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা বিদেশে গিয়ে দেশের অর্জিত অর্থ অপচয় করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল, কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান, কেয়ারি কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জিহাদি এবং যাত্রী পরিবহন বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, পর্যটন এবং পরিবেশ দুইটাকেই সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ধ্বংস করতে একটি শক্তিশালী চক্র লেগে আছে। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চলছে। পর্যটন বাঁচলে কক্সবাজার বাঁচবে। পর্যটক সীমিতকরণ কোন প্রতিকার নয়।