কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব রাজারকুল গ্রামে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার। একটি ঝুপড়ি ঘরেই চলতে থাকে কার্যক্রম। ২০১৮ সালে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গণগ্রন্থাগার থেকে পায় সরকারি নিবন্ধন। এরপর পাঠাগারের কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়।
পাঠাগারের সদস্যরা জানান, সম্প্রতি ঝুপড়ি পাঠাগার কক্ষটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দা ঝিনা বড়ুয়ার দান করা ১০ শতক জমিতে দালান পাঠাগার ভবন করার উদ্যোগ নেয় পাঠাগারটির কর্মীরা।
স্থানীয়ভাবে গণচাঁদার মাধ্যমে দোতলা ফাউন্ডেশনের কাজের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। অধিক ব্যয়সাধ্য হওয়ায় পুননির্মাণ কাজ বারবার মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, এক হাজার ২৪ বর্গফুটের দোতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দেওয়া আছে। নিচের তলায় পাঠাগার ও উপরের তলায় হাইটেক পার্ক হবে। ইতোমধ্যে নয়টি কলামের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে আর কোনো টাকা নেই বরং ধার-দেনা হয়ে আছে। সবাই সাধ্যমতো এগিয়ে এলে দ্রুত কাজ শেষ করতে পারবো।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠাগার পুননির্মাণের কাজ চললেও একটি অস্থায়ী ভবন থেকে চলছে বই পড়া ও ধার কার্যক্রম। বিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস, কবিতা, গল্পসহ পাঁচ হাজারের অধিক বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন ও দৈনিক পত্রিকা আছে পাঠাগারটিতে।
পাঠাগার ভবন না থাকায় পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও থেমে যায়নি কার্যক্রম। সম্প্রতি সরকারিভাবে মুজিবশতবর্ষে পাওয়া বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার ও মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক তিন শতাধিক বই যুক্ত হয়েছে পাঠাগারটিতে। নিত্য নতুন বই ধার নিতে পেরে খুশি পাঠকরাও।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী পিয়াল বড়ুয়া বলেন, আমাদের গ্রাম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় একাডেমিক বই ছাড়া সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই পাওয়া দুষ্কর ছিল। জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার হওয়ার পর গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সহজেই বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই অনায়াসে পড়তে পারছে।
সংগঠকদের দাবি, জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার হলেও শুধুমাত্র বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর কার্যক্রম। গ্রামের সাধারণ মানুষের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে কাজ করে জ্ঞানান্বেষণ ব্লাড ডোনেশন ক্লাব। তাছাড়া সাপ্তাহিক সিনেমার প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করছে জ্ঞানান্বেষণ ফিল্ম সোসাইটি। পাঠাগারের উদ্যোগে রামুতে সাতটি সেলুনে স্থাপিত হয়েছে মিনি সেলুন পাঠাগার।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক শিপ্ত বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সময় ডিজিটাল রেভুলেশনের যুগ। ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করা যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের এলাকার যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনযোগ দিক। পাঠাগারের প্রস্তাবিত ভবনের দোতলায় এক হাজার ২৪ স্কয়ার ফুট জায়গায় ৫০টি কম্পিউটারের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স চালুর পরিকল্পনার কথা জানান এ সংগঠক।
সম্প্রতি একই এলাকার আবু তাহের নামে এক ব্যক্তির জরায়ুমুখের অপারেশনেও পাঠাগারের চিকিৎসা তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর আগেও একই গ্রামে ক্যান্সার ও লিভারের দুজন মরণাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় তহবিল গঠন করে চিকিৎসা করিয়েছে পাঠাগারের সদস্যরা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষানুরাগীরাও জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার পুননির্মাণের গুরুত্বের কথা বলছেন। রাজারকুল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এমইউপি স্বপন বড়ুয়া বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাসহ সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে এ পাঠাগার। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে পাঠাগার পুননির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ হবে।
দোতলা বিশিষ্ট জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার ভবন নির্মাণ হলে রামু উপজেলার জ্ঞানের চাহিদা যেমন মিঠবে তেমনি হাইটেক পার্ক যুবকদের উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেবে বলছেন পাঠাগার সংগঠকরা।