রাঙ্গুনিয়ায় ১৭ জন পাওনাদারের ৩ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে ওয়াসিম রেজা নামে এক ব্যবসায়ী। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের কাছেও তার খোঁজ নেই। এই ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ১০ পাওনাদার। টাকা ফিরে পেতে এলাকায় মানববন্ধনসহ তার ঘর ঘেরাও কর্মসূচীও করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে অংশ নেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী টিটু, মো.বাদশা, গেবিন্দ সাহা, গৌতম পাল, মো. ইউসুফ, মো. রুবেল, ফিকলু, মহিউদ্দিন, আলমগীর চৌধুরী, সালাউদ্দিন টিপু, নাজিম, শওকত, আনিস প্রমুখ। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে অভিযুক্ত "ওয়াশিম রেজাকে ধরিয়ে দিন" ব্যানারে তার বাড়ির সামনে এবং পরে মোগলেরহাট বাজারের মরিয়মনগর-গাবতল ডিসি সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। এসময় ওয়াসিম রেজার ঘর তালা মারা ছিল। এ আগে হাসান মুরাদ নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ওয়াসিম রেজা(৩১), তার স্ত্রী এনিয়া আক্তার (২৫), বাবা মো. মুস্তাফিজুর রহমান (৬০), ও তার মা ছেনোয়ারা বেগমকে (৫৫) বাদী করে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মানববন্ধনে তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, 'তেল-চিনি-গম-লোহা-সিমেন্ট ইত্যাদি ডিলারের ব্যবসা করে বলে জানান ওয়াসিম। তিনি দুই বছর যাবত বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লাভ দেয়ার কথা বলে অল্প স্বল্প টাকা নিতে থাকেন। সে সময় কয়েকজনকে কিছু লাভের টাকাও দেন। যখন সবার বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেন তখন বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা দাগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেন। নেয়ার সময় বিশ্বাস করানোর জন্য স্টাম্পও দিতেন। এক পর্যায়ে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটির বেশি। এরপর গত ২মাস আগে পরিকল্পনা করে সে গোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় তার পরিবারও জড়িত বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। পরবর্তীতে তার পরিবারকে চাপ দিলে তারা ওয়াসিমকে বের করে আনেন। এরপর গত ১৭ নভেম্বর স্থানীয়ভাবে সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে সে প্রথম মাসে ২০ লাখ এবং পরের মাস থেকে ১০ লাখ টাকা করে পাওনাদারের টাকা ফেরত দিবেন এই মর্মে নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিতভাবে সাক্ষর দেন। কিন্তু গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগীরা পাওনা টাকার জন্য ওয়াশিমের বাড়িতে গেলে তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে প্রথম মাসের টাকা দেওয়ার আগেই আবার লাপাত্তা হয়ে যায় ওয়াসিম রেজা। এখন পর্যন্ত সে পলাতক রয়েছে বলে জানান তারা। যাওয়ার আগে পৈতৃক পাওনা সম্পত্তি তার বড় ভাইয়ের নামে লিখে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জানতে ওয়াসিমের ব্যবহৃত তিনটি মোবাইলে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। পরে তার বাবা মুস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে কল দিলে ওয়াসিমের বড় বোন সাকি আক্তার কথা বলেন। তিনি জানান পুরো পরিবার বাড়ি থেকে পালানোর বিষয়টি মিথ্যা। বাবা অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এছাড়া ওয়াসিমের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। সে বাড়িতে মোবাইল রেখে পালিয়েছে। আমরাও তাকে খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়াও যে পাওনাদারেরা টাকা পাচ্ছে তারা বিভিন্নভাবে ওয়াসিম সহ আমাদের পরিবারের সবাইকে হুমকি দিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা রাঙ্গুনিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) করিম জানান, ওয়াসিম রেজার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তার পরিবারের সাথে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার বাবা অসুস্থ থাকায় কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে ওয়াসিম আত্নগোপন থাকায় মুলত কত টাকা সেটা বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছবির ক্যাপশনঃ রাঙ্গুনিয়ায় পাওনাদারের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন।