কক্সবাজার সাগর তীর ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও ঝাউবনের কারণেই সৈকত ধ্বংস হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, সাগর পাড়ে অসংখ্য ঝাউগাছ লাগানাে হয়েছে। তবু ভাঙন রোধ হচ্ছেনা, বরং বিস্তৃত হচ্ছে ভাঙন। দীর্ঘদিনের গবেষণা এবং বাস্তবতা বলছে, ঝাউগাছ রোপন করে সাগরের ধাক্কা সামলানো সম্ভব নয়। এ কারণে সমুদ্রতীরে ঝাউগাছ আর রোপণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।
সোমবার (২৯ আগস্ট) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেক আয়োজিত কর্মশালায় আবদুর রহমান এ কথা বলেন।
সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সামুদ্রিক এলাকায় বিপন্নপ্রায় সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণে সম্পাদিত জরিপের ফলাফল অবহিতকরণ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বন ও পরিবেশ গবেষক আবদুর রহমান বলেন, ঝাউগাছের কারণে সৈকতে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে, সাগর থেকে কাছিম কূলে এসে ডিম ছাড়তে পারে না ঝাউগাছের প্রতিবন্ধকতার কারণে। এ ছাড়া ঝাউগাছের ছায়ার কারণে বালিয়াড়ি ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সাগরলতা মরে যাচ্ছে। নিজেদের ভুল স্বীকার করে বন কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতির বিষয়টি না জেনে ১৯৭৫ সাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সোনাদিয়া দ্বীপে ঝাউগাছ রোপণ করে আসছে বন বিভাগ।
ইউএসআইডি’র অর্থায়নে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) কর্তৃক বাস্তবায়িত নেচার এন্ড লাইফ প্রকল্পের জরিপের ফলাফল ও সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন ড. ফরিদ আহসান।
কাছিম সংরক্ষণের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ কর্মশালায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন।
বক্তব্য দেন, সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক নেসারুল হক, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম, চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রাণতোশ রায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্যারিনাম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ড. এসএমএ রশিদ, কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. শরীফ।
শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন কোডেকের উপ-নির্বাহী প্রধান কমল সেনগুপ্ত।
প্রকল্প পরিচালক শীতল কুমার নাথের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিগণ সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন, কাছিম সংরক্ষণে সরকারী-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ এবং জেলেদের জাল থেকে কাছিম যাতে নিরাপদে বের হতে পারে তার জন্য জালে টিইডি’র ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় জানানো হয়, কোডেকের নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের উদ্যোগে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৪৩ হাজার ৩৫টি কাছিমের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩৬ হাজার ৪১৯টি কাছিমের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান।