বাবুল চৌধুরী, দেবরানী চাকমা, অংগ্যপ্রু মারমা নির্বাচনী মাঠে এক পরিচিতি মুখ। এঁরা ছাড়াও আরো অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরাই এবার উপজেলা নির্বাচনের মাঠে ভোট যুদ্ধে নেই। বাবুল চৌধুরী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৯এর ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা যায়, দলীয় সমর্থন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বাবুল চৌধুরী ৪হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকে রাজেন্দ্র চাকমা পান ৩হাজার ৮১০ ভোট। রাজেন্দ্র চাকমা অবশ্য এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাঁর একমাত্র প্রতিপক্ষ লক্ষ্মীছড়ি কার্বারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রতন বিকাশ চাকমা নির্বাচন করছেন টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে। ভাইস চেয়ারম্যান রাজু চাকমা দিপান্তর ও সুমনা চাকমাও এবার নির্বাচন করছেন না। বাবুল চৌধুরীর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন স্বপন চাকমা অংগ্য প্রু মারমা ও নিলবর্ণ চাকমাও এবার নির্বাচেনের মাঠে নেই। নির্বাচনী মাঠে ছিলেন, উল্যাচি মারমা, মো: নুরে আলম, মেরিনা চাকমা, রত্না চাকমা। এর মধ্য থেকে মিনুচিং মারমা পদ্ধফুল প্রতীক নিয়ে এবার নির্বান করছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী অয়ক্রই প্রু মারমা ফুটবল প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: আলমগীর হোসেন এর নাম আলোচনায় আসলেও ভোটের মেরুকরণে শেষ পর্যন্ত তিনিও ভোটের মাঠে গরম হাওয়া ছাড়েন নি।
এর আগেরবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৪ ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা যায়, ইউপিডিএফ সমর্থীত প্রার্থী সুপার জ্যোতি চাকমা (আনারস) প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৩৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আ.লীগ প্রার্থী ছিলেন সাথোয়াই অং মারমা (মোটরসাইকেল) ২হাজার ৯৪৬ ভোট পান। এবারো ইউপিডিএফ’র সমর্থন নিয়ে কৈ মাছ প্রতীক নিয়ে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সুপার জ্যোতি চাকমা। তাঁর প্রতিদ্বন্ধি রয়েছে আরো দু’জন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাথোয়াই অং মারমা আনারস প্রতীক এবং প্রয়াত ১নং লক্ষ্মীছড়ি ইাউপি চেয়ারম্যান সুনীতি কুমার চাকমার ছেলে লক্ষ্মীছড়ি বিআরডিবির ইউসিসিএলি. চেয়ারম্যান রতন বিকাশ চাকমা লড়বেন হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে। তবে রতন চাকমার প্রচারণার দৃশ্য চোখে পড়েনি। ভাইস চেয়ারম্যান পদ অংগ্য প্রু মারমা (চশমা) ৫হাজার ২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী রতন বিকাশ চাকমা (টিউবওয়েল) ৪হাজার ২০৩ ভোট পান। এবার কার্বারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রতন বিকাশ চাকমা টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে রাজেন্দ্র চাকমার সাথে লড়াই করছেন। তখন ওই নির্বাচনে লড়াই করে জিতে ছিলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেবি রানী বসু (পদ্ম ফুল) ৫ হাজার ১০৮ পান ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী সুমনা চাকমা (তীর ধনুক) ৪হাজার ১০৭ ভোট।
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম ধাপেই ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। এবার অবশ্য উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে না। দলীয় প্রতীক না থাকলেও বিজয় নিশ্চিত করতে দলের একাধীক প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না দলটি। সে কারণেই লক্ষ্মীছড়ি উযপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ হতে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাথোয়াই অং মারমা চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে লড়ছেন।
সংবাদের শুরুতেই উল্লেখ করেছি এবার নির্বাচনী মাঠে নেই পরিচিত, আলোচিত হেভিওয়েট অনেক প্রার্থীরাই। যেমন বাবুল চৌধুরী, দেবরানী চাকমা. অংগ্য প্রু মারমা, স্বপন চাকমা, নিলবর্ন চাকমা, হরিমোহন চাকমা, রাজু চাকমা দিপান্তর, সুমনা চকমা, সাগরিকা চাকমা, মো: নুরে আলম, মেরিনা চাকমাসহ আরো অনেকে। অবাক হলেও সত্যি চলমান উপজেলা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ উপজেলার কান্ডারি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান কেউই এবার নির্বাচন করছেন না। ভাইস চেয়ারম্যান রাজু চাকমা ও সুমনা চাকমা মনোনয়ন পত্র গ্রহণই করেন নি। আলোচনায় ছিলো ২০০৩সালে তৎকালীন ৩ পার্বত্য জেলায় একমাত্র নারী ইউপি চেয়ারম্যান দেবরানী চাকমা এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। দেবরানী চাকমা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান প্রায়াত রবি ভুষন চাকমার কন্যা। ২০০৮ সালে বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য রেম্রাচাই চৌধুরীর সাথে উপজেলা নির্বাচন করে হেরে যান। দেবরানী চাকমাও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে নেই। সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এমনটা শোনা গেলেও তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধিতায় সামিল হন নি।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীসহ ৬জন চেয়ারম্যান পদে এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫জন মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় সমর্থন না থাকাসহ নানা কারণে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সর্বোপরি নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে চেয়ারম্যান প্রার্থীতা থেকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী প্রত্যাহার করেছেন। তিনি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পেইজে আবেগঘন স্টাটাস দিয়ে লক্ষ্মীছড়ি বাসীর কাছে মা চেয়েছেন। তিনি লিখেন প্রিয় লীছড়িবাসী ও আমার শুভাকাঙ্খী সকলের কাছে কর জোরে মা প্রার্থনা করছি। যদিও এই লেখার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করেন নি কেনো কি? কারণে এই স্টাটাস দিয়েছেন। তবে এই লেখার মধ্য দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নানা প্রশ্ন থেকেই গেলো।
এছাড়াও নিলবর্ন চাকমা ও হরিমোহন চাকমা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে রতন বিকাশ চাকমা, সাথোয়াইঅং মারমা ও সুপার জ্যোতি চাকমা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধিতায় টিকে রইলেন। পুরুষ ভাই চেয়ারম্যান পদে ২জনই রতন বিকাশ চাকমা ও রাজেন্দ্র চাকমা ভোটের মাঠে আছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাগরিকা চাকমা প্রত্যাহার করে নেয়ায় মিনু চিং মারমা ও অয়ক্রই প্রু মারমা নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ ছড়াবেন। ইতিমধ্যে প্রতীক পেয়েই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। যদিও মাঠে তেমন ভোটের উত্তেজনা নেই বললেই চলে। তেমন প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন এমনটাই জানা গেছে।
সাধারণ মানুষ চায় শান্তি। আন্তরিক মনোভাব আর সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে যিনি কাজ করবেন তাকেই এ উপজেলার অভিভাবক দেখতে চায় পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকলেই। অতীত পূর্ণরাবৃত্তি না ঘটুক সেটাই চায় মানুষ। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভোটাররা যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২১হাজার ১৮৫জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৬৭৭জন, মহিলা ১০হাজার ৫০৮জন। এখানে চাকমা, মারমা, মুসলিম, হিন্দু ও সাঁওতাল ভোটার রয়েছে। এ উপজেলা চাকমা ভোটার সবচেয়ে বেশি। এরপর মারমা ও মসুলিম ভোটার। কিছু হিন্দু ভোটার রয়েছে, আছে কয়েকশ সাঁওতাল ভোটারও। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবারো নির্বাচনে আসছে না। ফলে দলীয়ভাবে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।